
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
`গত সরকারের আমলে যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হলেও শিক্ষার মান রক্ষা করা হয়নি। মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় নাই। ফলে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। একটা জেনারেশন টোটালি ব্যর্থ হয়েছে।`
এমন মন্তব্য করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল।
শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
উপাচার্য বলেন, `আমি এখানে যোগদানের পর এখানে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা দেখেছি। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে দলীয়করণ করা হয়েছে। শিক্ষক না থাকলেও ইচ্ছামতো বিভাগ খোলা হয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রমে নিয়মকানুন মানা হয়নি। শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য কেনো আচরণবিধি তৈরি করা হয় নাই। বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ করত একটি অসাধু চক্র; শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে। এখানে গত ১৬ বছরেও কোনো সিস্টেম গড়ে ওঠেনি।`
বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিক পথে আনার জন্য এবং একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী রিসার্চ সেল গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগার-মেডিকেল সুবিধা বাড়ানো, খেলাধুলার পরিবেশ বাড়ানো, আবাসিক হলের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিজ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার মান তথা শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে সার্বক্ষণিক অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আধুনিক যুগোপযোগী বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনবল তৈরি করা হচ্ছে। যে সকল বিভাগের অ্যাক্রিডিটেশন নাই সেসব বিভাগের অ্যাক্রেডিটেশন নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্ধ অ্যাকাডেমিক স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা যাতে মুক্তমনে চলাফেরা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে পারে তার ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন ক্লাব গড়ে তোলার কাজ চলছে। আমরা এমন পদ্ধতি গড়ে তুলতে চাই যাতে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবনাবাসীর গর্ব হয়ে ওঠে।
উপাচার্য ড. আব্দুল আওয়াল বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদানের পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু অবকাঠামোগত নয় তাদের মনোজাগতিক পরিবর্তনে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যাতে তারা দক্ষ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে গড়ে ওঠে। শিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞান সৃষ্টির উপযোগী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলা হবে।
সভার শুরুতে উপাচার্য জুলাই- আগষ্টে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান। এছাড়া গত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে খুন, গুম এবং আহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কি এগিয়ে নিতে সাংবাদিকদের সহযোগিতক চেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন বাড়ানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। পাবনার ঐতিহ্য কৃষি, পশুপালন; এগুলো নিয়ে গবেষণা করা হবে। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। যার মাধ্যমে নতুন একটি ফ্লেভার তৈরি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, সাংবাদিক রুমী খন্দকার, রাজিউর রহমান রুমী, আব্দুল হামিদ খান, নরেশ মধু, এমজি বিপ্লব চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, কলিট তালুকদার, শাহীন রহমান, আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, শামসুল আলম প্রমুখ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান খান, ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুল হক, রেজিস্ট্রার বিজন কুমার, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মান্নান, সাংবাদিক সুশান্ত সরকার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, কামরুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা শিথিলসহ শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকবৃন্দ।