প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
সাতক্ষীরার কুল জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে স্থান করে নিতে শুরু করেছে। যা চাষ করে ব্যাপক লাভের আশা দেখছেন জেলার অসংখ্য কৃষক। শীত মৌসুমের এ চাষে প্রতিবছর কৃষক মোটা অংকের লাভের মুখ দেখেন।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সাতক্ষীরার মাটি কুল চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ২০০০ সালের পর থেকে এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু হয়। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য ফসল উৎপাদন কমিয়ে জেলার শত শত কৃষক কুল চাষ শুরু করেছে। এ বছর জেলার সাতটি উপজেলায় কুল চাষ ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে কলারোয়া উপজেলায় (৪৭০ হেক্টর)। কলারোয়ায় ৪৭০ হেক্টর, তালায় ১৬৫ হেক্টর, সদরে ১১২ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৪৫ হেক্টর, শ্যামনগরে ২৫ হেক্টর, আশাশুনি ২০ হেক্টর, দেবহাটায় ৪ হেক্টর।
জেলার বিভিন্ন এলাকার জমির আইল, মাছের ঘেরের বেড়িবাধে ও পতিত জমিতে কুলগাছ সারিবদ্ধ ভাবে চাষ করা হয়। উন্নত প্রযুক্তির ফলে এ কুলগাছ বেশি বড় না হওয়ায় যেকোন স্থানে সহজে এ চাষ করা যায়। তাছাড়া বেশিরভাগ গাছের উচ্চতা পাঁচফুট হওয়ায় সহজে দেখভাল করা যায়। গাছগুলো ছোট ছোট হওয়া কুল সংগ্রহ করা যায় সহজে। তাছাড়া কুলের ভারে গাছের ডাল মাটিতে নুয়ে পড়ায় দরকার হয় মাচার। বর্তমান জেলার বিভিন্ন বাগান থেকে আগাম জাতের কুল সংগ্রহ শুরু করেছে কৃষক। এতে বাজারদর বেশি পাওয়ায় কৃষক ভালবান হচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন এলাকার অনেকেই কুল চাষ করে বেকারত্ব কাটিয়ে উঠছেন।
এ বছর কুলের ফলন বেশ ভালো দাম ও ভালো। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে মিষ্টি কুল ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। আর টক কুল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে। এছাড়া কুল সংরক্ষণ ও বাজারজাত করণে জড়িত কয়েকশ শ্রমিক। প্রতিদিন এসব শ্রমিকরা কুল ক্ষেত পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। সাতক্ষীরার উৎপাদিত সব ধরনের কুলের দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ জেলার উৎপাদিত কুল জেলার চাহিদা মিটিয়ে খুলনা, ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়ে থাকে।
ভৈরব নগর এলাকার উদ্যোক্তা মো. আল মামুন বলেন, আমি ইমামতি করি। আমার মসজিদের সামনে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে কুল বিক্রি করছি। এটি আমার পার্ট-টাইম কাজ। সাতক্ষীরার কুল সারা দেশে বিখ্যাত, বিশেষ করে মিঠাবাড়ির কুল। এখানে নারিকেল কুল, টক কুল, থাই আপেল কুল, বেশি আপেল কুলসহ বিভিন্ন জাতের কুল পাওয়া যায়। বাজারে কুলের দাম ১৪০-১৫০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। রাস্তায় প্রায় ২০-৩০ জন কুল বিক্রি করেন এবং আমরা সবাই ভালো লাভ করছি।
সাতক্ষীরা নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি এলাকার কুল চাষি পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস জানান, আমি বহুদিন ধরে কুল চাষ করছি। এবছর চার বিঘা জমিতে চাষ করে এখন পর্যন্ত ৩-৪ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। আমার বাগানে নাইকেল কুল, থাই আপেল কুল, বল সুন্দরী, টক কুলসহ বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে নাইকেল কুলের দাম সবচেয়ে বেশি, ১৮০-২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘায় ১০০ মণ কুল উৎপাদন হয় এবং খরচ বাদ দিয়ে এক লাখ টাকা লাভ থাকে। এ বছরও একই রকম লাভের আশা করছি।
মিঠাবাড়ি এলাকার আরেক কুল চাষি মো. সোহাগ হোসেন বলেন, এবছর এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছি, আশা করছি ১০০ মণ কুল পাবো। ইতোমধ্যে ৫০ মণ বিক্রি হয়ে গেছে। এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। আমার বাগানে বিভিন্ন ধরনের কুল রয়েছে, এর মধ্যে নারিকেল কুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি এবং দামও বেশি, যা স্থানীয়ভাবে ১৮০-১৯০ টাকা কেজি এবং ঢাকায় ২০০-২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কুল চাষিদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলার কুল চাষিরা দেড়শ’ কোটি টাকার বেশি বাজার মূল্য পাবেন। সাতক্ষীরার কুল দেশীয় বাজারে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানিরও বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কুল রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।