• ঢাকা সোমবার
    ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ঝুঁকিতে উপকূলের মধ্যে নারীরা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫, ১১:০৬ পিএম

জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ঝুঁকিতে উপকূলের মধ্যে নারীরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বাংলাদেশকে, যা তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ুর জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। সমগ্র বিশ্বজুড়ে চলছে জলবায়ু পরিবর্তনের কঠিন প্রভাব। বাংলাদেশও তার মধ্যে পিছিয়ে তো নেই বরং একটু বেশিই এগিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। আবার যদি নারী ও পুরুষের কথা আলাদা আলাদা করে ভাবা হয় তা হলে সবাই এর প্রতিকূল অবস্থার শিকার। কিন্তু নারীরা একটু বেশি। শুধু দুর্যোগের সময় নয়, প্রায় সবসময়ই নারীরা একটু বেশি ভুক্তভোগী। বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদ, হাওরাঞ্চল, তিস্তা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বন্যা ও নদীভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোয় বসবাসকারীরা প্রতিনিয়ত জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

এই অঞ্চলের নারীরা নানা অর্থনৈতিক, সামাজিক, শারীরিক সমস্যার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় নারী দের অংশগ্রহণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মাধ্যমিক পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়া মেয়েদের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ঝরে পড়ছে, ফলে তারা কেউই কর্মোপযোগী কোনো দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। পারছে না কোনো সম্মানজনক অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজে নিতে। একটি পরিবারে প্রতিদিন নারী ও পুরুষ উভয়ই যখন কাজ করে তখন কর্মক্ষেত্র থেকে প্রায় একই সময়ে ফিরে আসে। দুজনেই পরিশ্রান্ত। তবে ক্লান্ত নারীরা যখন রান্নাঘর থেকে শুরু করে পরিবারের সব কর্মকান্ডে মনোনিবেশ করে পুরুষ তখন বাড়িতে বসে টিভি কিংবা পত্রিকা পড়ে ।

অনেক সময় বন্ধুদের সঙ্গে সময় যাপন করে। বৈষম্য শুরু হয় এখান থেকে। এখানে যে বৈষম্য দেখছি তা সব ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবযুক্ত এলাকায় এ বৈষম্য একটু বেশিই হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উপকূল, পাহাড়ি ও দুর্গম অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি হয় এবং এ অঞ্চলের নারীরা এর কুফল অনেক বেশি ভোগ করে থাকে। সবটুকু যাতনা তাদের ওপর দিয়ে যায়।

এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী ও শিশুর ওপর ব্যাপক সামাজিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দিন দিন মানুষের কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। ফলে পরিবারের পুরুষরা নতুন জীবিকার খোঁজে স্থায়ীভাবে অথবা বছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন, যার ফলে মৌসুমি অভিবাসন বাড়ছে। ফুড ফর হাংগ্রির অর্থায়নে সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রনের (সিপিই) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, কক্সবাজার জেলায় প্রায় ১০ শতাংশ, পটুয়াখালী জেলায় প্রায় ৩০ শতাংশ, বরগুনা জেলায় প্রায় ৩৪ শতাংশ মৌসুমি অভিবাসন হয় জীবিকার তাগিদে।

এই অভিবাসনের কারণে নারীর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অভিবাসিত পুরুষের একটি বড় অংশ বহুবিবাহে জড়িত পড়ার কারণে ডিভোর্সের হার বাড়ছে, বাড়ছে নারীপ্রধান পরিবারের সংখ্যা। গবেষণায় আরও দেখা যায়, বেশিরভাগ মৌসুমি অভিবাসিত লোকজন ইটভাটায় কাজ করে। যেসব পরিবার নারী, শিশুসহ অভিবাসিত হয়, সেসব নারী ও শিশুরা ইটভাটায় কাজ করে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে বড় রকমের প্রভাব।

আর্কাইভ