প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মতবিনিময় সভা, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারী) উপজেলার চকদড়ি খড়িতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাক আহমেদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপ্ররিষদ সচিব কালিগঞ্জের কৃতি সন্তান ড. শেখ আব্দুর রশীদ।
বক্তব্যে তিনি বলেন, দুর্নীতি ও সুশাসন নিশ্চিতে আমি কাজ করতে চাই। তৃণমূল পর্যায়ে প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের সেবার মনোভাবে নিয়ে কাজ করতে হবে। এই জনপদের মানুষ আমি কিন্তু চাকুরির সুবাদে এলাকার বাহিরে থাকতে হয়েছে। তবুও মনটা পড়ে থাকত আমার প্রিয় জন্মভুমিতে। আজ অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন যাদেরকে আমি চিনতাম ও জানতাম, অনেকেই বেঁচে আছেন যারা দেশের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন। জনগণের টাকায় উন্নয়নমূলক সকল প্রকল্পে দুর্নীতির লাগাম টেনে নির্মূল করে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে হবে । কোন রাস্তার জন্য বরাদ্দের টাকা ২০-৩০% কাজ হয় না আর এই ভাবেই সরকারি অর্থ কাজ না করেই লোপাট হয়। এখানে অনেক জন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি আছে এই সমস্ত দুর্নীতি রোদে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।সম্মিলিত প্রচেষ্টা, প্রতিরোধ ছাড়া দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব না। এই সমস্ত দুর্নীতির কারণে দেশের অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার বাবা আমার কাছে পীরের মতন হলেও আমার সন্তানের কাছে কিছু না। এ কারণে আমার জন্মস্থান এই খড়িতলা গ্রামে আমার নিজস্ব জায়গায় সবার জন্য একটি কবরস্থান এবং যাকাত ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে সুপেয় পানির প্রকল্প উদ্বোধন ছাড়াও এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য একটি কমিউনিটি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র তৈরি করে দিয়েছি। যেখানে প্রতিদিন এই যাকাত ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে মানুষ সেবা নিতে পারবে। এখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বক্তব্যে বলেন বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সাতক্ষীরার ৫টি আসনের পরিবর্তে ৪টি আসনে ভাগ করে কালিগঞ্জ শ্যামনগরকে দ্বি-খন্ডিত করায় কালিগঞ্জের কোন উন্নয়ন হয়নি। অচিরেই ৫টি আসন পূনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করার দাবি জানান। এছাড়াও বক্তারা বলেন পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবন ম্যানগ্রোভে পর্যটন শিল্প হিসাবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমে শ্যামনগর, কালিগঞ্জ সাতক্ষীরা মহাসড়কে দ্রুত কাজ করে চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। এছাড়াও মুন্সিগঞ্জ থেকে নাভারন পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের দাবি জানানো হয় । এলাকার মানুষের কর্ম সংস্থানের জন্য বসন্তপুর নৌবন্দর পূণঃ স্থাপনের দাবি জানানো হয়। উপজেলার লবণাক্ত ১২টি ইউনিয়নে সুপেয় পানির প্রকল্প নিয়ে এলাকার মানুষের পানির সমস্যা সমাধানের দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন আমি মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড, আব্দুর রশিদ স্যারের অনুকরণে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই। সাতক্ষীরা তথা প্রতিটি উপজেলায় দুর্নীতি রোধ করার জন্য প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে। শুধুমাত্র প্রশাসন দিয়ে দুর্নীতি, মাদক, জুয়া, চোরাচালান, ঘুষ বন্ধ করা যাবে না, নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রত্যেককেই প্রতিরোধের এবং প্রতিবাদের মাধ্যমে সমাজ থেকে এই ঘৃণিত কাজ দূর করতে হবে । প্রতিটি পাড়া মহল্লায় কোন মাদক ব্যবসায়ী চোরাচালানী থাকলে তাকে ধরে আইনি সোপর্দ করতে হবে। প্রতিটি অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমাদের সব ক্ষেত্র দুর্নীতি মুক্ত হবে। এজন্য সবাইকে সম্মিলিত ভাবে সকল রাজনৈতিক দল সহ জনগণ মিলে কাজ করতে হবে। আমাদের দেশে বর্তমান যে অবস্থা তাতে একজন এম,পি হলে জনগণ বলে দুর্নীতিবাজ আর একজন চেয়ারম্যান হলে জনগণ বলে চাল, গম চোর। আমাদের এ থেকে বেরিয়ে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। আর এই পরিবর্তন ডিসি, এসপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি, এসিল্যান্ডের পক্ষে একা করা সম্ভব না । সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। মত বিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল।
বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গাজী নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জজকোর্টের পিপি এ্যাডঃ শেখ আব্দুস সাত্তার, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওঃ আজিজুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ডাঃ শেখ শফিকুল বাবু, উপজেল বিএনপির একাংশের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলার ছাত্র সমন্বয়ক রাকিবুজ্জামান রাকিব প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অমিত কুমার বিশ্বাস।
তিনি এর আগে পিতা মাতার কবর জিয়ারত, খড়িতলা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, গোরস্থান ও কার্পেটিং সড়কের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাবেক ও বর্তমানের জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, সূধীবৃন্দ এবং শতশত সাধারণ জনতা।