• ঢাকা শনিবার
    ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১

১৭ দিন ধরে অচেতন লালমনিরহাটের অজ্ঞাত কিশোরের পরিচয় মেলেনি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ১০:০৫ পিএম

১৭ দিন ধরে অচেতন লালমনিরহাটের  অজ্ঞাত কিশোরের পরিচয় মেলেনি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গত ১৭ দিন ধরে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে লালমনিরহাটের অজ্ঞাত এক কিশোর। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন।

গাইবান্ধা রেলওয়ে বিভাগ, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল ও গাইবান্ধা নারী ও শিশু কল্যাণ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক কিশোর গুরুতর আহত হয়। পরে খবর পেয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রেলওয়ে পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং গ্রাম পুলিশের সহায়তায় ওই কিশোরকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর অচেতন এই কিশোর মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে। সেই সাথে তার উন্নত চিকিৎসাও প্রয়োজন বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানতে পেরে অজ্ঞাত এই কিশোরের পাশে দাঁড়ায় গাইবান্ধা নারী ও শিশু কল্যাণ সংস্থা। তারা শুরু থেকে সকল ব্যয় বহন করছে ও ছেলেটির পরিবারের সন্ধানের চেষ্টা করছে। জানতে পেরে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল রোডের হেলথ্ প্লাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসে অজ্ঞাত এই কিশোরের পাশে। প্রতিষ্ঠানটি শুক্রবার মাথার সিটি স্ক্যান অব ব্রেইন, লাম্বার স্পাইন, বুকের এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করে দেয় সম্পুর্ণ বিনামূল্যে। অজ্ঞাত এই কিশোরের বিষয়টি জানতে পেরে পরামর্শ ফিও নেননি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হক। তিনি পরীক্ষা-নীরিক্ষার রিপোর্ট দেখে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করেন। বর্তমানে ওই কিশোর গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ৩৫ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। অসহায় এই কিশোরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সিএফএইচ হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মানবিক বিভিন্ন মানুষ।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা নারী ও শিশু কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কায়সার প্লাবন বলেন, অজ্ঞাত এই কিশোরের পরিচয় বের করতে ১৭ জানুয়ারি রংপুর সিআইডির একটি বিশেষ টিম গাইবান্ধায় আসে। দলের সদস্যরা ওই কিশোরের হাতের আঙ্গুলের ছাপ মেলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ছেলেটি এখনো ভোটার না হওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে একটি পুরোনো ভিডিওতে এই কিশোরকে বলতে শোনা যায়, বাড়ী লালমনিরহাট, তার বাবা ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন আর মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। তবে কথাবার্তায় এই কিশোরকে কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বলে মনে হয়েছে।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল রোডের হেলথ্ প্লাস ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোস্তাক আহমেদ মাছুম বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অজ্ঞাত এই কিশোরের বিষয়ে জানতে পাই। মানবিক দিক বিবেচনা করে সিটি স্ক্যান মেশিনটি সচল করে তার পরীক্ষা-নীরিক্ষা বিনামূল্যে করে দেওয়া হয়। এমনকি পরামর্শ ফিও নেননি নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। 

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হক বলেন, অজ্ঞাত ওই কিশোরের মাথায় রক্তক্ষরণ হয়ে রক্ত জমাট বেঁধেছে। মাথায় হাড় ভেঙ্গেছে, কোমরের হাড় ভেঙ্গেছে। হিমোগেøাবিন কমে গেছে। এজন্য দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। তার চিকিৎসা এখানেই সম্ভব। কেননা তাকে দেখভাল করা বা পরিবারের সন্ধান এখানো পাওয়া যায়নি। তাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। হাড়ের বিষয়ে হাড়ের চিকিৎসক দেখাতে হবে। বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন ডা. এস. এম. নূর-ই শাদীদ সিঞ্চন অজ্ঞাত কিশোরকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন।  

আর্কাইভ