প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১০:২২ পিএম
পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ সহ চার বিচারকের অপসারণের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রবিবার রাত আটটায় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মুল ফটকের সামনে হ্যান্ড মাইকে এই ঘোষণা দেন। এসময় তিনি আদালতের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে কোন ধরনের তথ্য থাকলে সোমবার দুপুরের মধ্যে তাঁর বরাবরে লিখিতভাবে জমা দিতে বলেছেন। এসময় তিনি সেই লিখিত অভিযোগ প্রধান বিচারপতির কাছে পৌঁছানোর কথা জানান। পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ফিরে যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা।
এর আগে, নিয়োগ-বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও হুমকির অভিযোগে গত বুধবার দুপুরের পর জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে দাবি করা হয়, পঞ্চগড় আদালতের জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম ফারুক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মন্ডল, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুজ্জামান ও জুডিশিয়াল ম্যাজিেেস্ট্রট আবু হেনা সিদ্দিকী এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করছেন। ওই দিন বিক্ষোভে এই চার বিচারককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের সময়সীমা বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ায় রবিবার দুপুরে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভের শুরুতে আন্দোলনকারীরা আদালতের ভেতরে থাকা সাধারণ মানুষকে বের হয়ে যেতে মাইকে ঘোষণা দেন। এরপর বেলা ২টা ২০ মিনিটে আন্দোলনকারীরা আদালতের মূল ফটক সহ সীমানা প্রাচীরের সব ফটকে শিকল পেঁচিয়ে তালা দেন। এতে আদালতের ভেতরে থাকা বিচার প্রার্থী সহ অন্য লোকজন আদালত চত্বরে আটকা পড়েন। এমনকি কাজ থাকা সত্ত্বেও অনেকে বাইরে থেকে আদালতের ভেতর ঢুকতে পারেননি। এরপর বিক্ষোভকারীরা মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করতে থাকেন। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, মোকাদ্দেসুর রহমান সহ শতাধিক আন্দোলনকারী অংশ নেন।
পরে বিকেল তিনটার দিকে পঞ্চগড় তেতুঁলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে শুরু করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এসময় অনেকে মহাসড়কেই ফুটবল খেলতে শুরু করে। আন্দোলনের একপর্যায়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সময় বেধেঁ দেন আন্দোলনকারীরা।
এসময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হোসাইন, পঞ্চগড় আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আদম সুফি আন্দোলনকারীদের ডেকে সমাধানের চেষ্টা করছিলেন। এরপর পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরই মাঝে পরে তারা আদালতের মুল ফটকের তালা ভেঙ্গে আদালতে ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের গেটের কাঁচ ভাংচুর করে। পরে তারা আদালত চত্বরেই অবস্থান করতে থাকে। পরে আইনশৃংখলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
তবে রাত সোয়া সাতটার দিকে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন বিচারকদের অপসারণের বিষয়ে আইন উপদেষ্টার সাথে কথোপকোথনের কথা জানান। পরে রাত আটটায় পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী আদালত চত্বরে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। তবে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্তটা আইন মন্ত্রণালয়ের সামারি হয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। সিদ্ধান্দ হলো, অভিযোগ ওঠা চারজন বিচারক আগামীকাল (সোমবার) থেকে পঞ্চগড় আদালতে কোনো বিচারকাজ করবেন না এবং তাঁরা এখান থেকে চলে যাবেন। আর আপনাদের যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা লিখিত আকারে আমার কাছে দেবেন, আমি সেগুলো মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাব।’
জেলা প্রশাসকের ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা আনন্দ মিছিল করতে করতে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন। তবে ভাংচুর সহ অন্যান্য ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে যেন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তারও দাবি জানান। এ সময় জেলা প্রশাসক তাঁর ওপর আস্থা রাখতে বলেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোকাদ্দেসুর রহমান সান বলেন, গত দুই মাস ধরে প্রশাসন আমাদের কোন কথা শোনেনি। নিয়োগ নিয়ে জেলা জজ আদালতের অনিয়ম অনেকদিন ধরে চলছে। আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় আমাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন বিচারকেরা। তবে আজকে (রবিবার) আমাদের আন্দোলন চলমান ছিল। জেলা প্রশাসক আশ্বাস দিয়েছেন চার বিচারককে অপসারণের বিষয়ে। পরে আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, আমরা দুর্নীতিবাজ বিচারকদের অপসারণের জন্য আন্দোলন করেছি। আজকে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, বিচারকদের আর কোথাও বিচারকাজে বসানো হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি জানার পরে আমরা জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি।