
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এটা নিশ্চিত করেই বোধহয় বলা যায়, নির্বাচন কমিশনও বলেছে। ইভিএম ব্যবহার হবে না। কারণ এটা দুর্বল যন্ত্র। এটার মাধ্যমে কারচুপি সম্ভব। নির্বাচন ব্যবস্থায় কোনো যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে রাজনৈতিক ঐক্যমত দরকার। সেটা ছিল না। শুধু তাই নয়, ইভিএম কেনার ব্যাপারে কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির যিনি প্রধান ছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী; তিনিও এতে দ্বিমত করেছিলেন। সে দ্বিমত উপেক্ষা করে কেনা হয়েছিল। এবার এটা হবে না, নিশ্চিত করেই বলতে চাই।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘যারাই নির্বাচনী অপরাধ করেছে, নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছে, নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে কিংবা কারচুপিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত। যারা অন্যায় করেছে, নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তির প্রস্তাব এসেছে। আমি তো মনে করি এটা যৌক্তিক। কারণ, অন্যায় করে পার পেয়ে গেলে অন্যায় উৎসাহিত হয়।’
‘এমন কোনো প্রশ্ন করবেন না, যেটা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে’ এ অনুরোধ জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেন বদিউল আলম মজুমদার। ‘এটি এখতিয়ারের বাইরে’ উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের বেশকিছু প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সিস্টেমটা ভেঙে গেছে। সিস্টেমটার পরিবর্তন করতে হবে। তাহলেই নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যকর হবে। এ রকম অনেকগুলো প্রস্তাব মতবিনিময় সভায় এসেছে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে, ভোটার তালিকায় প্রবাসীদের নিশ্চিত করতে হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে, তাহলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হবে। আমরা যে প্রস্তাবগুলো করব, সবগুলো না হলেও যতগুলো সম্ভব হবে।’
সংস্কার কমিশন কতদিন কাজ করবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ তিন মাস। অক্টোবরের ৩ তারিখে প্রজ্ঞাপনটা জারি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব ডিসেম্বরের মধ্যেই আমাদের প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরার। আমরা যে প্রস্তাবগুলো দেব, সেগুলো কিছু বাস্তবায়ন করবে সরকার, কিছু নির্বাচন কমিশন, কিছু আপনারা (গণমাধ্যম) এবং সাধারণ মানুষ।’
এ পর্যন্ত কী ধরনের সংস্কার প্রস্তাব আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক অনেক প্রস্তাব আসছে। সারাদিন লাগবে বলতে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ করা, নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ও ক্ষমতায়ন করা; রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নির্বাচনী অপরাধ, নারীর প্রতিনিধিত্ব, আচরণবিধি, গণমাধ্যমের আচরণবিধি এই সবগুলোই হলো আমাদের এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত। এ নিয়েই আমরা আলোচনা করি, মতামত শুনি এবং এসব নিয়েই সুপারিশ করব।’
নির্বাচন কবে হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজটা কি? এই কমিশনের কাজ নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা না। আমাদের কাজ হলো নির্বাচন ব্যবস্থাটা ভেঙে গেছে, এ ব্যাপারে অংশীদারের ভিত্তিতে কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব করা। নির্বাচন কবে হতে পারে, এটাও আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। এগুলো দেখার কাজ নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন দেখবে।’
এর আগে সকাল থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় মতামত গ্রহণ করেন তিনি। এ সময় সংস্কার কমিশনের সদস্য নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, শাসন প্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন, বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।