প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ০১:২৭ পিএম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন পুলিশকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছিল– একজন কিডনি রোগীকে সহযোগিতা করার লক্ষ্য নিয়ে ব্যাংকে হানা দেয় তারা।
বৃহস্পতিবার রাতে তিন ডাকাতকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ সাঈদ বলেছিলেন, ‘তারা কোনো চলচ্চিত্র বা ভিডিও গেমস দেখে একটি ফ্যান্টাসিতে ভুগে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা ১৮ লাখ টাকা ব্যাগে নিয়েছিল। এই টাকা দিয়ে একজন কিডনি রোগীকে সাহায্য করার কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি এ টাকা দিয়ে আইফোন কেনার পরিকল্পনা ছিল বলে তারা জানিয়েছে। তবে তারা যে রোগীর ঠিকানা দিয়েছে, সেটি যাচাই-বাছাই চলছে। আদৌ সত্য কিনা, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।’ কিডনি রোগীর ব্যাপারে তদন্ত করে পুলিশ নিশ্চিত হয়, দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে এমন নাটক সাজায় তারা। এখন তারা স্বীকারও করেছেন– প্রথমে কিডনি রোগীকে সহযোগিতায় যে তথ্য দিয়েছিলেন, সেটি বানোয়াট ছিল। মূলত ব্যাংক থেকে টাকা লুট করার তাদের উদ্দেশ্য ছিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, কিডনি রোগীর যে বিষয়টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওরা বলেছিল, তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। মাসখানেক ধরে তারা ব্যাংক ডাকাতির ছক কষছিল। ব্যাংক তারা রেকিও করে আসে।
ওসি আরও বলেন, মূল পরিকল্পনাকার হলো লিয়ন মোল্লা নীরব। আরাফাত ও সিফাত টোপ দিয়ে এই কাজে সে ব্যবহার করেছে। তাদের মোটরসাইকেল ও আইফোন কিনে দেওয়ার কথা ছিল।
গ্রেপ্তার নীরব গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা কবির মোল্লার ছেলে। দুই কিশোরের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী খালপাড় এলাকায়। নীরব পেশায় গাড়িচালক। বাকি দু’জনের একজন একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী, আরেকজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
চুলকুটিয়া জিনজিরা শাখায় ডাকাতির চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার লিয়ন মোল্লা ওরফে নীরবের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া একই সময়ে গ্রেপ্তার দুই কিশোরের জবানবন্দি নেওয়া হয়। শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হিরন কুমার বিশ্বাস তাদের আদালতে হাজির করে। এর পর গ্রেপ্তার লিয়ন মোল্লা ওরফে নীরবের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড এবং দুই কিশোরের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আবেদন করেন।
এক মাস থেকেই ডাকাতির জন্য তারা ব্যাংকের ভেতর ও আশপাশে রেকি করে। ঘটনার দিন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকে ঢুকেই সিসি টিভির ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। ডাকাতির ঘটনার মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনার নেপথ্যে কেউ আছে কিনা, তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ডাকাত দল ব্যাংকটিতে ঢুকে পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তাদের অভিযানের এক পর্যায়ে আত্মসমর্পণ করে তিন ডাকাত।
ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী রতন বিশ্বাস। তিনি জানান, ডাকাতরা নিজের রক্ষায় বোমা বানানো অভিনয় করেছিল, নানা হুমকি দিয়েছিল। মাথায় পিস্তলসদৃশ্য তাক করে রেখেছিল।
গ্রাহক বাবুল খান বলেন, ব্যবসার টাকা জমা দিতে দুপুর ২টার দিকে তিনি রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় যান এবং ক্যাশ কাউন্টারে এক কর্মকর্তার কাছে টাকা জমা দেন। তিনি যখন টাকা গুনছিলেন, তখন মাস্ক ও চশমা পরে তিনজন ব্যাংকে ঢোকে। তারা সঙ্গে করে একটি তালা নিয়ে এসেছিল। ঢোকার পরপরই তারা ওই তালা দিয়ে ব্যাংকে ঢোকার দরজা বন্ধ করে দেয় এবং ব্যাংকের দু’জন নিরাপত্তা প্রহরীকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে মেঝেতে বসিয়ে রাখে। ব্যাংকে তখন কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রাহকসহ প্রায় ১৮ জন ছিলেন। তারা সবাইকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে এক জায়গায় নিয়ে মাথা নিচের দিকে উপুড় করে বসতে বলেন।
বাবুল খান বলেন, ওই তিনজন সবার মোবাইল নিয়ে নেয়। পরে তারা ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে তার ছিঁড়ে ফেলে। এ ছাড়া কিছু আসবাব ভাঙচুর করে। এতে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে দু’জন পিস্তল তাক করে সবাইকে পাহারা দেয়। বাকি একজন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যাগে ভরছিল। যখন তারা টের পায়, বাইরে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছেন, তাদের বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে, তখন তারা ব্যাংকের পেছনের দিকে থাকা লোহার গ্রিল ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করে। তখন তারা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করে, মূল দরজার বাইরে বের হওয়ার অন্য কোনো পথ আছে কিনা। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বের হওয়ার পথ শুধু একটি বলে জানান। এর পরও তারা বের হওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে; কিন্তু ব্যর্থ হয়।