প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৪, ১১:৫২ পিএম
রবি মৌসুমের শুরুতে লালমনিরহাটের বাজারে সার সংকট দেখা ও সারের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে কৃষকরা খোদ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। তাদের মতে, রবি মৌসুমের শুরু থেকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা যদি মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে তদারকি করতেন তাহলে কৃষকদের উচ্চমূল্যে সার কিনতে হত না। ফলে লাভবান হতেন এখানকার কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, নভেম্বর মাসে রবি মৌসুম শুরু হয়। চলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। আলু ভুট্টা সরিষা গমসহ নানান সবজি চাষাবাদ হয় রবি মৌসুমে। রবি মৌসুমের শুরুতে জমিতে পর্যাপ্ত সার প্রয়োগ করেন চাষিরা। ফলে রবি মৌসুমে সারের চাহিদা তুলনা মুলক ভাবে বেশি থাকে। বর্তমানে কৃষকরা রবি ফসল বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌসুমের শুরুতে চাহিদা মত সার ন্যায্যমুল্যে না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় কোথাও কোথাও অধিক মুল্যে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কৃষকরা দাবী করে বলেন, বিসিআইসি সার ডিলারদের নিকট থেকে অধিকমূল্যে সার কিনেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এরপর খুচরা ব্যবসায়ীরা একটু লাভের আশায় তারাও বেশী দামে বিক্রি করেন। ফলে বিপাকে পড়তে হয় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বিসিআইসি ডিলারদের নিকট সার কিনলেও তারা কখন সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করেননি। এমনকি সার বিক্রির রশিদও দেয়া হয় না তাদের। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব বিসিআইসি সার ডিলারদের সাথে খোদ উপজেলা কৃষি অফিসারের আতাত রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালান কৃষি বিভাগের লোকজন।
সম্প্রতি আদিতমারী উপজেলার বুড়িরবাজারে দুটি খুচরা বিক্রেতা সারের দোকানে অভিযান চালিয়ে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও একশ ৭৮ বস্তা সার জব্দ করেন। তবে এসব খুচরা বিক্রেতার সার বিক্রির কোন অনুমোদন ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে একাধিক খুচরা সার বিক্রেতা জানান, পানি নীচের দিকে গড়ায়। তারা দাবী করে বলেন, কখনও দেখিনি কৃষি বিভাগের লোকজন বিসিআইসি সার ডিলারের দোকানে অভিযান পরিচালনা করেছেন। নিশ্চয়ই এসব ডিলারদের সাথে তাদের আতাত রয়েছে।
জানাগেছে, ট্রিপল সুপার ফসফেট ( টিএসপি) প্রতিবস্তা ১৩৫০ টাকার স্থলে ১৭০০ টাকা এবং বাংলা ডিএপি ১০৫০ টাকার স্থলে দুই হাজার টাকা দামে কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। শুরুতে এমন ধাক্কা খেয়ে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়ছে তেমনি চাষাবাদ নিয়েও শ্বঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আদিতমারীর দেওডোবা গ্রামের কৃষক নয়ন মিয়া বলেন, তামাক চাষ করতে প্রচুর পরিমান সার লাগে। শুরুতেই সারের সংকট দেখা দিয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বাংলা টিএসপি ও ডিএপি সার বস্তা প্রতি ৪ শ থেকে ৬ শ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিলার বলেন, লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৩টিতে ব্যাপক হারে তামাক চাষ হয়। বাকী পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধায় ব্যাপক ভাবে চাষ হয় ভুট্টা। তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রচারনা নেই এমনকি তামাকের জন্য কোন সার বরাদ্দ চান না কৃষি বিভাগ। তামাক চাষেও প্রচুর পরিমান সার লাগে। যার বরাদ্দই দেয় না কৃষি বিভাগ। ফলে তামাকের জমির বিপুল পরিমান সার সরবরাহ করতে এ রবি মৌসুমে সারের এ ঘাটতি থেকে যায়। সংকট দুর করতে হলে যেহেতু তামাক চাষ হয় এবং চাষিরা এসব সার তামাক ক্ষেতে প্রয়োগ করেন। তাই তারও চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে বরাদ্ধে দেয়া উচিৎ। নতুবা সংকট থেকেই যাবে।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ওমর ফারুক জানান, বিসিআইসি সার ডিলার হউক আর বিএডিসি সার ডিলার হউক কেউই সারের দাম বেশী নিতে পারেন না। যদি নিবন্ধিত কোন খুচরা বিক্রেতার নিকট থেকে কোন ডিলার বেশী নেয় তাহলে আমাদেরকে অভিযোগ দিলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। এখন পর্যন্ত কোন বিসিআইসি ডিলারের দোকানে কোন অভিযান পরিচালনা করেছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পরিচালনা করেন নি বলে স্বীকার করেন। তবে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে এ কর্মকর্তার দাবী।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সাইফুল আরেফিন সাংবাদিকদের জানান, সারের কোন সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যাক্তি গুজব সৃষ্টি করে সংকট তৈরী করছেন। এসব অসাধু ব্যাক্তি ও বিক্রেতার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।