প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম
ফরিদপুরের সালথায় জমিজমা নিয়ে বিরোধ ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আনিচুর মোল্যা (৩০) নামে এক যুবককে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মারাত্বক জখম করে। এসময় তার দুই হাত ও দুই পায়ে ৩০টি কোপ দেওয়া হয়। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা যায়, গত ১৩ নভেম্বর দুপুরের দিকে সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের সোনাপুর পূর্বপাড়া একটি নতুন কবরস্থানের পাশে এ ঘটনা ঘটে। আহত আনিচুর মোল্লা সোনাপুর পুর্বপাড়া গ্রামের সাহেব মোল্যার ছেলে। এই ঘটনায় আতিক ফকির, হাসেম ফকির, আতিকুর মিয়া ও কাইয়ুম নামে চারজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে সালথা থানা পুলিশ। বাকি আসামীরা পলাতক রয়েছে।
এই ঘটনা থেকে মামলার অন্যন্যা আসামীদের বাচাতে বুধবার রাত ৩টার দিকে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব সোনাপুর গ্রামের মো. চানু ফকিরের বাড়িতে ঘরের টিনের চালা কেটে কয়েক ডাকাত ভেতরে ঢুকে চার বছরের এক শিশুর গলায় চাকু ধরে নগদ ৩ লাখ টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ও ৪ ভরি স্বর্ণালংকারসহ ৯ লাখ টাকার মালপত্র ডাকাতি অভিযোগ এনে শুক্রবার সালথা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন আনিচুর মোল্যাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামী মো. চানু ফকিরের স্ত্রী মোছা. শিউলী বেগম। এতে ডাকাত হিসেবে চিহ্নিত করেন আনিচুর হত্যা প্রচেষ্টা মামলার বাদী আনিচুরের আপন ভাই হাফিজুর মোল্যা ও হাদি মোল্যাকে।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান। তিনি ঘটনাটি তদন্ত করার সময় নগদ ৩ লক্ষা টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে ডাকাতি মামলার বাদি শিউলী বেগম কোন উত্তর দিতে পারেনি। এছাড়া মো. চানু ফকির ও আনিচুর হত্যা প্রচেষ্টা মামলার প্রধান আসামী আতিক ফকির তার আপন চাচাতো ভাই। তখন বিষয়টি পুলিশের সন্দেহ হলে তারা আরো খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন, ডাকাটির ঘটনাটি পুরোটাই সাজনো।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আনিচুর সোনাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান বাবুর সমর্থক এবং আতিক ফকির বিএনপি নেতা সালথা সরকারি কলেজের শিক্ষক জয়নাল আবেদিনের সমর্থক। ২০২০ সালের নভেম্বরে আতিক ফকিরের ফসলি জমির পাশে অবেধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ভরাট করে আনিচুর মোল্যারা। ওই বালু চলে যায় প্রতিবেশি আতিক ফকিরের ফসলি জমিতে। পরবর্তীতে আতিক ফকিরের ফসলি জমি থেকে বালু উঠিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে আনিচুরদের সাথে আতিক ফকিরদের হাতাহাতি হয়। এতে উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়। পরেরদিন আনিচুর ও তার লোকজন আতিক ফকিরের হাত ও পায়ে ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে উপুর্যুপুরিভাবে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। সেই ক্ষোভ থেকে গত ১৩ নভেম্বর আনিচুর মোল্যাকে একলা পেয়ে আতিক ফকিরের পরিবারের লোকজন মিলে কুপিয়ে আহত করে।
আতিক ফকিরের স্ত্রী মাফুজা বেগম জানান, ৪ বছর আগে আমার স্বামীকে কুপিয়েছিল আনিচুর ও তার পরিবারের লোকজন। আমরা বিএনপিপন্থী হওয়ায় এ ঘটনার তখন ন্যায় বিচার পাইনি। আনিচুররা আওয়ামীলীগের লোক হওয়ায়, সে ক্ষমতা দেখিয়ে আমাদেকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বলতো ‘কেউ কথা বললে আতিকের মতোই কুপানো হবে’। সেই ঘটনায় মামলা এখনও চলমান রয়েছে।
তিনি আরো জানান, আমার স্বামী সুস্থ হতে এক বছর সময় লেগেছে। আজও সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাফেরা করে। সেই ক্ষোভ থেকে হয়তো আনিচুরকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে।
আনিচুরের ভাই হাফিজুর জানান, আনিচুরের দুটি হাত ও একটি পায়ে ৩০ টি কোপ দিয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে হয়েছে। হাত-পায়ের হাড়গুলো কেটে ও ভেঙ্গে যেভাবে চুরমার হয়েছে, তাতে তিনি বাঁচলে পঙ্গু হয়ে বাঁচতে হবে। আবার মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে আমাদের নামে ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা ন্যায় বিচার চাচ্ছি।
ডাকাতি মামলার বাদি শিউলি বেগমের বক্তব্য না পাওয়ায় তার ছেলে নাছির ফকির জানান, আমাদের বাড়িতে ডাকাটি হয়েছে এটাই সত্য কথা। টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা আমার দিদেশে জাওয়ার টাকা। সেই টাকা আমি বাড়িতে রেখেছিলাম।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান জানান, ডাকাটির সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনা স্থানে গিয়ে দেখি চানু ফকিরের ঘরের চাল কাটা। কিন্তু তার প্রতিবেশিরা জানান, রাতে মো. চানু ফকিরের পরিবারের লোকজনের ডাকত চিৎকার শুনে তার বাড়িতে এসে ঘরের চাল কোথাও কাটা ছিল না। ডাকাতি হওয়া নগদ ৩ লক্ষা টাকার উৎস সম্র্পকে জানতে চাইলে ডাকাতি মামলার বাদি শিউলী বেগমকে কোন উত্তর দিতে পারেনি। ডাকাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে হাফিজুর মোল্যা ও হাদি মোল্যাকে তাদের বাড়ি মাত্র ৫০ গজ দুরে। আবার হাফিজুর মোল্যা আনিচুর মোল্যাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামী মো. চানু ফকির যে মামলায় আসামী সেই মামলার বাদি। সব কিছু মিলে বিষয়টি আমার কাছে মনে হয়েছে, ‘ডাকাটির ঘটনাটি পুরোটাই সাজনো’। তার পরেও ঘটনাটি সর্বচ্চো গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।