প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৭:২২ পিএম
ফরিদপুরে এক স্কুলছাত্রকে রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে বেদম মারপিটের পর মাটি খুড়ে জ্যান্ত পুতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের আলীপুরে অবস্থিত একটি সংবাদপত্র কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ওই ছাত্রের পরিবার।
ফরিদপুর সদরের বড় মাধবপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মোস্তাক মাতুব্বর জানান, গত শনিবার রাতে তার ১৩ বছর বয়সী স্কুলপড়ুয়া ছেলে জিহাদ মাতুব্বর ওয়াজ শুনতে যাওয়ার সময় এলাকার বখাটে কতিপয় কিশোর তাকে ধরে বেদম মারপিটের পরে একটি কবরস্থানে নিয়ে কবর খুড়ে জ্যান্ত পুতে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় তারা জিহাদকে তার বাবার নিকট থেকে পাঁচলাখ টাকাও নিয়ে আসতে বলে। মোস্তাকের ছোট ছোট চারটি ছেলেমেয়ের মধ্যে জিহাদই বড়। কানাইপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সে।
এ ঘটনার পরে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কতিপয় তরুণ জিহাদকে মারতে মারতে জামার কলার ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে একটি কবরস্থানে। সেখানে পৌছে আবারও তাকে মারতে মারতে এক তরুণকে কোদাল দিয়ে গর্ত খুড়তে দেখা যায়। এসময় জিহাদকে ওই যুবক বলে- ‘ তোরে জবই করবো না, জ্যান্তই পুইত্যা ফ্যালাবো। কোহনে কোহনে ক? জায়গা পছন্দ কর।’ তখন তাদের একজনকে কবর খুড়তে খুড়তে হাহা করে হাসিতে ফেটে পড়তে দেখা যায়। এরপর কেউ একজন সেখানে এক যুবককে ফোন ধরিয়ে দেয়ার পরে তাদের মাঝে কথাবার্তা হয়। এর কিছুক্ষণ পর যুবকটি জিহাদকে ছেড়ে দিয়ে বলে, বাইচ্যা গেলি আইজক্যার মতো। আর কবি ক’? তারপর তাকে সজোরে কিলঘুষি মারতে থাকে তারা।
জিহাদের মা মারিয়া আকতার জানান, ভয়ে তার ছেলে সেখানে পেশাব করে দেয়। বাড়িতে পৌছে সে বমিও করে। রাতেই তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি আমরা। প্রচন্ড ভয়ে তার পিত্তি গলে যাওয়ার দশা। এখনও সেই ভয়ংকর স্মৃতির ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে রয়েছে সে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী জিহাদ জানান, ক’দিন আগে তার চাচাতো ভাইদের বাড়ির পেছনে নদীর পাড়ে জড়ো হয়ে শোরগোল করতে থাকা একদল বখাটের নিকট সেখানে কারা বলে উচু স্বরে জানতে চেয়েছিলো। এই অপরাধে ওইদিন সন্ধ্যাবেলায় প্রথমে তাকে একদফায় মারপিট করা হয়। এরপর শনিবার রাতে বাবার নিকট থেকে হালিম খাওয়ার জন্য টাকা নিয়ে ওয়াজের মাঠে যাচ্ছিলো সে। তখন ওই যুবকেরা তাকে দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনতে বলে আর তারপর তার সিগারেট কেনার ভিডিও করে। তখন তার বাবাকে সিগারেট কেনার ভিডিও দেখিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে জিম্মি করে নেয়।
এ ঘটনায় তার বাবা মোস্তাক মাতুব্বর বাদি হয়ে রোববার রাতে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সিফাত (২৪), মাসুম (২৩), মারুফ (২০), আরাফাত (২০), সজল (২২), সাকিল (১৯) সহ আরো চার পাঁচজনকে আসামী করা হয়েছে। তারা জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদউজ্জামান জানান, অভিযোগটি পাওয়ার পর খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বিষয়টি। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং রাতেই জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ একাধিক অভিযানও চালিয়েছে। দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।