• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

লাউ চাষে করে শিক্ষার্থী আল-আমিনের বাজিমাত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ১১:৩৯ এএম

লাউ চাষে করে শিক্ষার্থী আল-আমিনের বাজিমাত

ফরিদপুর প্রতিনিধি

পাট ও পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা। এখানে মৌসুমে প্রায় ৯০ ভাগ জমিতে পাট ও পেঁয়াজের আবাদ হয়। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে লাউ চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কলেজ শিক্ষার্থী মোঃ আল-আমিন শেখ। গত কয়েক বছর যাবৎ লাউ, ধুন্দল, চন্দনি, পুইশাক ও অন্যান্য সবজি চাষ করে স্বালম্বী হয়েছেন আল-আমীন। বিভিন্ন সবজি চাষ করলেও এবার লাউ চাষে সাফল্য ধরা দেয়। লাউ চাষ করে বাজিমাত করেছেন শিক্ষার্থী আল-আমিন।

মোঃ আল-আমীন শেখ (২৩) উপজেলার যদুনন্দী ইউপির জগন্নাথদী গ্রামের দক্ষিণপাড়ার লিটু শেখের পুত্র। তারা ২ ভাই ৩ বোন। সে সবার বড়। আল-আমীন নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক ২ বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রকার সবজি ও লাউ চাষাবাদ করছেন। বাবা-মা সহ পরিবারের সবাই তাকে চাষাবাদে সাহায্য করেন। চাষাবাদের কারনে আল-আমীনের লেখাপড়ায় কোন সমস্যা হয় না। সবজি চাষে তিনি নিজেকে পারফেক্ট মনে করেন। দেশ ও কৃষির প্রতি টান থেকেই আল-আমীনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

চলতি মৌসুমে আল-আমীন প্রায় ১একর জমিতে লাউ চাষ করেন। সেখানে দুটি মাচা করেন। কাদা বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে বেড পদ্ধতিতে কয়েক প্রজাতির হাইব্রিড জাতের লাউ গাছ রোপন করে। মোট ১৩ টি বেড রয়েছে, একটি চারা থেকে অন্যটির দুরত্ব  প্রায় আড়াই ফুট, শতক প্রতি মাত্র ৫০০/৭০০ টাকা খরচ হয়েছে। ৪০-৪৫ দিন পর থেকে প্রায় প্রতিদিন লাউ সংগ্রহ করা যায়। লাউগাছ ৪ মাস পর্যন্ত ভালো ফলন দেয়। এর পরই ফলন কমতে থাকে। এই জন্য ৪ মাস পর নতুন করে লাউ গাছ রোপন বা অন্য কোন ফসলের চাষ করত হয়। লাউ সারাবছর চাষ করা যায়। তাই লাউ চাষকেই বেছে নিয়েছেন আল-আমীন। সব খরচ বাদ দিয়ে আল-আমীন প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা লাউ চাষে লাভ করবেন বলে ধারনা করছেন।

তরুন এই উদ্যেক্তা আল-আমীন জানান, পড়া লেখার পাশাপাশি আমি ঢাকায় ছোট্ট একটা চাকরি করতাম। শারীরিক অসুস্থতার কারনে বাড়িতে এসে চিকিৎসা নিতে থাকি পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ ও পরিবারের খরচ মেটাতে নিজেই চাষাবাদ শুরু করি। সবাই যেখানে পাট-পেঁয়াজ করে আমি সেখানে ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা করি। আমার এক বড়ভাই আমাকে সেই ভাবেই পরিকল্পনা দেন। তারই আলোকে আমি গতবছর পরিক্ষামূলক লাউ চাষ করি। সেখানে আমি কিছুটা সাফল্য পেয়ে এবছর প্রায় ১ একর জমিতে লাউ চাষ করি। সব খরচ বাদ দিয়ে এবছর লাউ চাষে আমি প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা আয় করবো।

আমি দেশকে ভালোবাসি এই মাটিকে ভালোবাসি, তাই কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। আমার মুলধন কম তাছাড়া আমার চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই আমি আমার দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে প্রায় ৫ একর জমি লিজ নিয়ে একটা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সেখানে ভার্মি কম্পোস্ট, জৈব সার তৈরি করা হবে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করতে পারবো। লাউ, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, পেপে, কয়েক প্রকার কলা সহ বিভিন্ন রকম সব্জি চাষ করবো। এখানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক একদম ব্যবহার হবে না বললেই চলে, সব কিছু হবে অর্গানিক। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই এবং সবাইকে কৃষি উদ্দোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেই।

উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুদীপ বিশ্বাস বলেন, তরুন কৃষি উদ্দোক্তা আল-আমীনের গল্প শুনেছি। তারা নিয়মিত আল-আমীনের লাউ ক্ষেত পরিদর্শন করছে। তিনি বাজারের কয়েকটি হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ করেছেন। তার বৃহৎ কৃষি পকল্পের গল্প শুনে ভালো লাগছে। তাকে যেকোন সেবা ও পরামর্শ দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা তাকে স্বাগত জানাই। এই রকম তরুণ কৃষি উদ্দোক্তাদের মাধ্যমেই কৃষিতে নতুনত্ব আসবে।

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ