• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষনের ভয়াবহতা সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান

এশিয়ার সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম

এশিয়ার সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক দানব তৈরী করা হয়পছে। সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষনের ভয়াবহতা সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসন কক্সবাজার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নির্মাণ করা হয়েছে দানবটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মিত হয়েছে আকাশছোঁয়া একটি দানব। এই দানব প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। জেলা প্রশাসন কক্সবাজার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে প্রদর্শন করা হবে প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি এ দানব ভাস্কর্যের।

জাবা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর এক দানব। যে দানবটি রক্ত-মাংসহীন প্রতীকী হলেও যার হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য। সৈকতে ঘুরতে আসা যে কেউ এটি প্রথম দর্শনে মনে ভয় বিরাজ করলেও কাছে যেতেই সে ভয় কেটে যাবে। আর জানবে দানবটির দেহে বয়ে বেড়ানো প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা।

আয়োজক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই সমাগম ঘটে লাখো পর্যটকের। যারা সৈকতের বালিয়াড়ি ও সাগরের পানিতে ফেলছে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর বর্জ্য। এতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন। আর প্রাণ-প্রকৃতির দূষণ রোধে এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও  স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি নিয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি দানব ভাস্কর্যের প্রদর্শনীর মত ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগের।

ফাউন্ডেশনের দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, গত প্রায় ১মাস ধরে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্র সৈকত থেকে সংগ্রহ করেছে অন্তত ১০ মেট্রক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মাণ করেছেন এই ‘প্লাস্টিক দানব।

গত ৭ নভেম্বর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ ও স্থানীয়দের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ মার্কেট’ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া খালি পাত্র, বোতল ও পলিথিনের প্যাকেটের  বিনিময়ে যে কেউ নিয়েছেন চাল, ডাল, তেল, চিনি ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এবং পর্যটকরা জিতে নেন বই,কলম,ক্যাপ,ব্যাগ সহ বিভিন্ন উপহার। এই কার্যক্রম থেকেই মূলত ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আঁটা (গাম) সহ আরও কয়েকটি উপকরণ। ভাস্কর্য শিল্পীদের দাবি, এটি এশিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব।

এদিকে শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে প্লাস্টিক বর্জ্যে নির্মিত এ দানবটি দেখতে ভিড় করেছেন সৈকতে ঘুরতে আসা হাজারো পর্যটক। তারা বলেছেন, এটি দেখতে এসে মানুষ দৈত্য-দানবের ভয়ংকর রূপের মত প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হবেন। পাশাপাশি নিজেরাও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সজাগ  থাকবেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সহ সচেতন মহল বলছেন, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে মানুষ প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত হবেন। তাদের মত অন্যান্য সংগঠন ও সংস্থাগুলোকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসা উচিৎ

আর্কাইভ