• ঢাকা শনিবার
    ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রয়োজনে সিলগালা করা হবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান * চলছে টাস্কফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

চট্টগ্রামে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর প্রশাসন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৬:৫৫ পিএম

চট্টগ্রামে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর প্রশাসন

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্ব গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। শুধু জেলা পর্যায়ে নয়, উপজেলা পর্যায়েও টাস্কফোর্স কমিটি ব্যাপকভিত্তিক বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। একইভাবে টাস্কফোর্সের কমিটির বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো মূল্যে সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। কোনো অবস্থাতেই বাজারকে অস্থিতিশীল করতে দেওয়া হবে না।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, টাস্কফোর্স কমিটি সদস্যরা প্রতিদিনই বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছেন। তারা এখনো সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখাচ্ছেন না। দ্রব্যের দাম অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে স্বাভাবিকে না এলে আগামী দিনগুলোতে টাস্কফোর্স কমিটি আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করবে। প্রয়োজনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেবে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে এমন তথ্য পেয়েছে টাস্কফোর্স। সদস্যরা তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছেন।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, কর্ণফুলী বাজার ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে কর্মকর্তারা ক্রয়ের চেয়ে অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় বা অতিরিক্ত মুনাফা করছে কিনা তা যাছাই-বাছাই করা হচ্ছে, পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্যে গরমিল, লাইসেন্স না থাকাসহ এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এসব তথ্যে অসামঞ্জস্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কর্মকর্তাদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা মতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলো পাইকারি ও খুচরা বাজারে একযোগে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোর উৎস চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাজার ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। না হয় মানুষের দুর্ভোগ কমবে না।

সোমবার নগরীর চৌমুহনি মার্কেটে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার অভিযোগে চার প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে চার হাজার টাকা, কৃষি বিপণন লাইলেন্স না থাকায় আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার টাকা জ?রিমানা করে টাস্কফোর্স।

অভিযানে নেতৃত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, চারটি প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে চারটি মামলায় সাড়ে চার হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানকে কৃষি বিপণন লাইসেন্স প্রদর্শন করতে না পারায় কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযান প?রিচালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন হোসেন। সাথে ছিলেন ছাত্র প্রতিনিধিসহ জেলা বিশেষ টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা।

এর আগে রোববার ভোগ্যপণ্যের বাজারে চলা অচলাবস্থার জেরে নগরীর পাইকারি বাণিজ্যকেন্দ্র খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজারের বিভিন্ন মুদি ও পণ্যসামগ্রীর দোকানে বিশেষ টাস্কফোর্স অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। এ সময় আটটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ক্রয়ের চেয়ে অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয়, পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্যে গরমিল, লাইসেন্স ও পাকা রসিদ না থাকা, দেশি-বিদেশি বাদাম, কিসমিস, খেজুর প্যাকেটজাত করে মেয়াদ না লেখাসহ বিভিন্ন কারণে জরিমানা করা হয়।

টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান জানান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে টাস্কফোর্স গঠিত কমিটি অভিযান পরিচালনা করছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য কোনো অবস্থাতেই বাজারে সিন্ডিকেট থাকা চলবে না। জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোর উৎস চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ