প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৬:৫৪ এএম
“অনেক নেতা প্রকাশ্যে বলছেন, ‘উপদেষ্টাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভ ঢুকে গেছে। তারা ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না।’ এটা তাদের ভুল ধারণা”, বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কবে দেবে- বড় হয়ে উঠা এই প্রশ্নের মধ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে ‘ব্যক্তিগত বক্তব্য জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, এই দুই জনের বক্তব্য সরকারের বক্তব্য নয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের হিলডাউন সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ধর্ম উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
নির্বাচন নিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “একটি সরকারের পতন হয়েছে। সেই সরকারের অবশিষ্ট সময় পূরণের জন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বসানো হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গ। সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে রাষ্ট্র নড়বড়ই থেকে যাবে। তাই সরকার সংস্কারে গভীরভাবে কাজ করছে।”
গত ৮ অগাস্ট সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিচ্ছে, তারা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা ঘোষণা করেনি।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোটের কথা বলা আছে। দৈব দুর্বিপাকে সেটি করা না গেলে পরের ৯০ দিনের মধ্যে করতে হবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু বিষয়ে সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে। শুরুর দিকে বিএনপি সরকারকে সময় দেওয়ার কথা বললেও এখন নির্বাচন চাইছে, অন্তত নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে ঘোষণার দেওয়ার দাবিও জানাচ্ছেন নেতারা।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চ্যানেল আইয়ের সংবাদ পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠান `আজকের সংবাদ’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “আমার কাছে মনে হয়, রিয়েলিস্টিক্যালি আগামী বছরের মধ্যে (২০২৫) ইলেকশন করাটা হয়ত সম্ভব হতে পারে।”
সরকার ‘কিছুদিনের মধ্যেই’ সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেবে বলেও জানান তিনি। এরপর ভোটার তালিকা হালনাগাদ হবে, বলেন তিনি।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধানও নির্বাচন হবে হতে পারে, সে বিষয়ে আভাস দিয়েছিলেন।
তিনি তখন বলেন, সংস্কারের মধ্য দিয়ে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রে উত্তরণ’ ঘটা উচিত। তবে সেজন্য সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সেনা প্রধানের বক্তব্য সরকারের বক্তব্য নয়। সরকার যতদিন নির্দিষ্ট করে বলবে না ততদিন নির্বাচনের সময় নির্ধারিত নয়।”
‘ক্ষমতা ছাড়তে চাই না- এটা ভুল ধারণা’
উপদেষ্টাদের ‘ক্ষমতা প্রীতির’ অভিযোগ তুলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পক্ষ থেকে আসা বক্তব্যেরও জবাব দেন ধর্ম উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “অনেক নেতা প্রকাশ্যে বলছেন, ‘উপদেষ্টাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভ ঢুকে গেছে। তারা ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না।’ এটা তাদের ভুল ধারণা। আমাদের কোনো ধরনের ক্ষমতা প্রীতি বা লোভ নেই, আমরা এসেছি অস্থায়ীভাবে।
“দেশ সংস্কারের জন্য আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাজ শেষ হলে কাউকে বলতে হবে না। নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা চলে যাব।”
সরকার সত্যি সত্যি জাহাজে করে হজযাত্রার উদ্যোগ নেবে কি না, এই প্রশ্নে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “জাহাজে করে হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। এই বিষয়ে সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয়েছে। “তবে তা সময় সাপেক্ষ। তাই ২০২৫ সালে সম্ভব নয়; ২৬ সালে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।”
দেশের মডেল মসজিদ নির্মাণ নিয়ে এক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “মডেল মসজিদগুলো নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে এটা ঠিক। এ রকম অনেক প্রমাণ ইতিমধ্যে আমরা পেয়েছি। এমনকি এক মসজিদ পরিদর্শনকালের আমি দেখেছি ফ্লোরে ফাটল।
“অভিযোগ ও প্রাপ্ত প্রমাণ হাতে নিয়ে আমরা তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং শিগগিরই কাজ শুরু হবে।”
এসব মসজিদ নির্মাণে সৌদি আরবের সরকার কোনো টাকা দেয়নি বলেও জানান খালিদ হোসেন।
আরেক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “বিগত সময়ে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক ভিত্তি থেকে সরে গিয়েছিল। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও সংস্কার করা হবে।”
ধর্ম উপদেষ্টা দুই দিনের কক্সবাজার সফরে রয়েছেন। শুক্রবার সকালে তিনি বিমানবন্দরে সাগর তীরের জেলাটিতে অবতরণ করেন।
সেখান থেকে ডিসি কার্যালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে নবনির্মিত কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন।
বিকাল ৩টায় কক্সবাজার বায়তুশ শরফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন খালিদ হোসেন। পরে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সার্কিট হাউসে আনুষ্ঠানিক বিফ্রিং করেন।
সন্ধ্যায় রামুর চাকমারকুল বড় মাদ্রাসা পরিদর্শন করে উপদেষ্টার প্রথম দিনে কর্মসূচি শেষ হয়।
শনিবার চকরিয়া-পেকুয়ায় একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দেবেন তিনি।