• ঢাকা শনিবার
    ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

ময়মনসিংহে বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি সাড়ে ৩ শ কোটি টাকা, নিঃস্ব অনেক মৎস্য খামারি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ১০:৩৫ এএম

ময়মনসিংহে বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি সাড়ে ৩ শ কোটি টাকা, নিঃস্ব অনেক মৎস্য খামারি

ময়মনসিংহ ব্যুরো

ময়মনসিংহে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষকের ফসলি জমির। আমন ধানের পুরোটাই গেছে ডুবে। টাকার অংকে যার ক্ষতি প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য খামারিরাও।

গত এক সপ্তাহ ধরে পানিতে ডুবে আছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ফুলপুর ও ধোবাউড়ার প্রায় ৮০ হাজার কৃষকের ফসলি জমি। এই তিন উপজেলায় ৮৯ হাজার ৫৫০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমির আমন ধান।

ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের বনপাড়া গ্রামের কৃষক বাসিন্দা আবদুর রশিদ (৬২) জানান, এবার তিনি ১০ কাঠা জমিতে আমন ধান করেছিলেন। গত রোববার থেকে তার ধানের জমি তলিয়ে আছে বন্যার পানিতে। ধানের গাছগুলোতে থোর বেরুচ্ছিল কেবল। সব ঠিক থাকলে মাস খানেকপর ধান কেটে ঘরে তুলবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

বর্গাচাষি জামাল উদ্দিন (৫২) বলেন, ‘মাস খানেক পরই ধান ঘরে তুললাম অইলে। কিন্তু আমার সব শেষ কইরা দিল পানি। আমার বাড়িতেও পানি, তিনদিন ধইরা ভাতও খাইতে পাই না, চিড়ামুড়ি খাই।’

বনপাড়া ব্রিজ মোড়ে কথা হয় মো. রফিকুল মিয়ার (৪৫) সঙ্গে। দুই একর জমিতে ধান চাষ করেছিলেন তিনি। সবই পানিতে তলিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমরার এলাকাডা ধানের, এক শতক জমিও পড়া আছিন না। কিন্তু এক শতাংশ জমিও ভাসা নাই। এক শতক জমির ধান কেউ তুলবো হেই আশাও নাই।’

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ধোবাউড়া ১৩ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমির আমন ধান চাষ করা হলেও পানিতে ক্ষতি হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমির ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৩ হাজার ২৫০ কৃষক। আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

ধোবাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম সরোয়ার তুষার বলেন, যে ক্ষতি হয়েছে কৃষকের তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

হালুয়াঘাট উপজেলায় ২৪ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হলেও তলিয়ে গেছে ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির আমন ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৮০০ জন কৃষক। আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১৩৫ কোটি টাকার।

হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমন ধানের জমি নষ্ট হয়ে ১৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কৃষকের। আমরা চেষ্টা করবো সরকারি পুনর্বাসন দিয়ে ক্ষতিটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য। সামনের মৌসুমে সরিষা ও অন্যান্য ফসল আবাদ করানোর ব্যবস্থা করানো হবে।

ফুলপুর উপজেলায় ২২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করলেও তলিয়েছে ৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমির ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৫০০ কৃষক। আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের উপপরিচালক মোছা. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, যেহেতু ধান নষ্ট হয়ে গেছে তার প্রভাব পড়বেই। পানি নেমে যাওয়ার পর সরিষা আবাদ করানোর ব্যবস্থা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

আর্কাইভ