• ঢাকা শুক্রবার
    ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

অশান্ত খাগড়াছড়ি পর্যটক শূন্য, দুই সপ্তাহে ক্ষতি ১০ কোটি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ১০:২৬ এএম

অশান্ত খাগড়াছড়ি পর্যটক শূন্য, দুই সপ্তাহে ক্ষতি ১০ কোটি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

হত্যা ও সহিংসতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত। সারাবছর পর্যটকে মুখরিত থাকলেও চিরচেনা সেই দৃশ্য এখন নেই। শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে চার দিনের ছুটি থাকলেও হোটেল-মোটেলগুলোতে বুকিং নেই। পর্যটক না থাকায় রুমগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন পর্যটকবাহী গাড়ির চালকরা। গত দুই সপ্তাহে পর্যটক সংশ্লিষ্ট খাতে অন্তত ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

কোনো উৎসব ছাড়াও সারা বছর খাগড়াছড়ির পর্যটক কেন্দ্র হাজারও পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকতো। খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা, রিসাং ঝরনা, জেলা পরিষদ পার্কসহ কোনো কেন্দ্রেই পর্যটক নেই। আলুটিলা সবসময় পর্যটকে ঠাসা থাকলেও এখন সেখানে সুনসান নীরবতা।

খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে এক বাঙালি যুবককে গণপিটুনিতে হত্যাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনার পর গত ১৯ সেপ্টেম্বরের পর থেকে খাগড়াছড়িতে আর পর্যটক আসেনি। এর পর শিক্ষার্থীরা এক শিক্ষককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনায় খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত একবারেই মুখ থুবরে পড়েছে। এরইমধ্যে প্রশাসন আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

ফলে শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে চারদিনের ছুটি থাকলেও হোটেল-মোটেলগুলোতে বুকিং নেই। পর্যটক না থাকায় রুমগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন পর্যটকবাহী গাড়ির চালকরা। পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশের অনেক রেস্টুরেন্ট ও দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বেতন দিতে পারছে না শ্রমিকদের। এ সংকটের অবসান চান পর্যটক নির্ভর মানুষগুলো।

খাগড়াছড়ি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা পর্যটক ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘খাগড়াছড়ি পর্যটন শিল্প অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত। এখানে পর্যটনের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক-কৃষিখাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে পাহাড়ে উৎপাদিত ফলসহ কৃষি পণ্যের চাহিদাও বাড়ে। অথচ এখন বিপরীত চিত্র। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে কর্মচারী বিদায় দিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। গত দুই সপ্তাহে পর্যটক সংশ্লিষ্ট খাতে অন্তত ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ে সহিংসতার পর ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে কোনো পর্যটক আসেনি। সামনে সাপ্তাহিক আর পূজার ছুটিতে এ সময় পর্যটনস্পটগুলো পর্যটকে মুখর থাকার কথা ছিল। অথচ আমাদের হোটেলসহ অন্যান্য আবাসিক হোটেলে কোনো কক্ষ বরাদ্দ হয়নি।’

এদিকে ১ অক্টোবর ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষার্থীরা সোহেল রানা নামে এক শিক্ষককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনায় খাগড়াছড়িতে নতুন করে সহিংসতা হয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বেড়েছে। এরইমধ্যে প্রশাসন আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রাকৃতিক বিভিন্ন প্রতিকূলতায় এমনিতে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমে আসছে। এর পর সাম্প্রদায়িক সহিংসায় কোনো পর্যটন আসছে না। এর মধ্যে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা কারণে পর্যটন ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

খাগড়াছড়ি পর্যটন করপোরেশন ব্যবস্থাপক উত্তম মজুমদার জানান, প্রাকৃতিক বিভিন্ন প্রতিকূলতায় এমনিতে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমে আসছে। এর পর সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় পাহাড়ে কোনো পর্যটন আসছে না। এর মধ্যে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা কারণে পর্যটন ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, শীঘ্রই চলমান অস্থিরতা কেটে যাবে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারবে।

পর্যটন খাত আবার চাঙ্গা এমনি প্রত্যাশা খাগড়াছড়ির সুশীল সমাজের।

আর্কাইভ