প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৪, ০৮:২৯ পিএম
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে এক প্রাইভেটকার চালকের আলিশান বাড়ি নির্মাণ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওই ড্রাইভারের নাম আতিকুর রহমান। তিনি সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা কাদেরের গাড়িচালক হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে টাকা কামিয়ে নিজ গ্রামে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি। এছাড়া ঢাকায় রয়েছে তার একাধিক ব্যবসা। প্রাইভেটকার চালক হয়ে আতিকের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ অর্জনে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিংগাইর পৌর এলাকার কাশিমনগর মহল্লার মৃত লেহাজুদ্দিনের ছেলে আতিকুর রহমান (৩৮)। সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়ার ইতি টেনে ড্রাইভিং পেশা বেছে নেন। এলাকায় কর্মজীবন শুরু করেন বেবিট্যাক্সি চালিয়ে। পরবর্তীতে ঢাকায় বড় ভাইয়ের ড্রাইভিং পেশায় চাকরির সুবাদে তার তদবিরে সুযোগ হয় সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিভাগে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করার। পরে দায়িত্ব পান সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়িচালক হিসেবে।
এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি আতিককে। তাদের আস্থা অর্জন করে বিভিন্নভাবে অবৈধভাবে কামিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। গ্রামের বাড়িতে নির্মাণ করেন দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি। পাশাপাশি ঢাকায় শুরু করেন জেন্টস পার্লার ও রেস্টুরেন্টের ব্যবসা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশপাশের একাধিক ব্যক্তি জানান, করোনার সময়ে সিংগাইর থেকে কোনো ইটভর্তি ট্রাক ঢাকায় ঢুকতে বিধি-নিষেধ থাকলেও আতিক মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে গাড়িপ্রতি ৫ হাজার করে টাকা নিয়ে গাড়ি প্রবেশ করার ব্যবস্থা করে দিতেন। এতে সিংগাইরের ভাটা মালিকরাও তার শরণাপন্ন হতেন। এভাবে আদায় করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা।
তারা আরও বলেন, আতিক ১৮ হাজার টাকা বেতনে সামান্য গাড়ি চালকের চাকরি করে কিভাবে শহরে একাধিক ব্যবসা ও গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। বিষয়টি টক অব দ্য সিংগাইরে পরিণত হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ড্রাইভার আতিকুর রহমানের অবৈধভাবে অর্থ সম্পদ অর্জনের উৎস নিয়ে লোকজন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে তদন্তসাপেক্ষে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত প্রাইভেটকার চালক আতিকুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে রিং হলেও রিসিভ না করে পরক্ষণেই বন্ধ করে দেন।
আতিকের ছোট বোন রাবেয়া খাতুন বলেন, আমার ভাই ঢাকায় চাকরি ও ইটের ব্যবসা করেন। পাঁচ-ছয় বছর মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালিয়েছেন। এখন ছোট খাটো সাহেবের গাড়ি চালায়।
আতিকের মা ছাহেলা খাতুন বলেন, আমার ছেলে সরকারি চাকরি করে, গাড়ি চালায়। এছাড়া ঢাকায় দুটি দোকান আছে পার্টনারে ব্যবসা করে।
তিনি আরও বলেন, বাড়ি নির্মাণে ২ কোটি টাকার মতো ব্যয় তো হবেই। আমার ছেলেটা এখন চাপের মধ্যে আছে। বিভিন্ন লোকজন বাড়িতে এসে টাকাপয়সা দাবি করে বলেও জানান তিনি।
সিংগাইর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুস বলেন, আমাদের কাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা। তদন্তের এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে এ বিষয়ে দুদকে কেউ অভিযোগ করলে কমিশন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আজিজ উল্লাহ বলেন, কেউ এ রকম হয়ে থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা আমার দুদক চায়; পিপি হিসেবে আমিও চাই। তবে আমাদের কাছে কোনো রেকর্ড না আসা পর্যন্ত আমলে নিতে পারি না।