প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চলের আওতায় ৬ জেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ৯৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ ব্যক্তিমালিকানা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিল আদায়ে কঠোর হলেও সরকারি দফতরগুলোর ব্যাপারে খুব একটা তৎপর নয়। এতে বকেয়া বিলের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জানা যায়, গত জুনের আগে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চলের আওতায় থাকা ৬ জেলায় সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া ছিল ১০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুন মাসে বকেয়ার ১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা তুলতে পারলেও অবশিষ্ট বকেয়া আদায় হয়নি। ময়মনসিংহে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া তালিকায় রয়েছে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সেনানিবাস, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও সিটি করপোরেশন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন পৌরসভায় বকেয়া পড়েছে ৪৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বকেয়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১ কোটি ৩৮ লাখ, রেলওয়ের কাছে ৩ কোটি ১৩ লাখ, ময়মনসিংহ ও ঘাটাইল সেনানিবাসে বকেয়া প্রায় ৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগার, পাসপোর্ট অফিস, দুদক, পুলিশ ও সড়ক বিভাগের কাছেও বকেয়া রয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ছাড়াও কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ ছয় জেলায় পিডিবির আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহক প্রায় ১৩ লাখ।
ঈশ্বরগঞ্জের রাবেয়া আক্তার বলেন, অল্প কিছু বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় গত ২৭ জুন থেকে আমার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় ঘরে কুপি জ্বালিয়ে গৃহস্থালির কাজ করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তার। বিল বকেয়া থাকায় দিনমজুর ওই পরিবারটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও উল্টো চিত্র সরকারি দপ্তরগুলোর বেলায়।
ত্রিশাল উপজেলার কোনাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর কর্মকার বলেন, আমরা নিয়মিত বিল পরিশোধ করলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাই না, লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ থাকি, বিল না দিলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, জরিমানা হয়, জেল হয়, অথচ সরকারি অফিসগুলোতে কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কেমনে স্বাভাবিক থাকবে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিল আদায়ে বিদ্যুৎ বিভাগ যতটা সোচ্চার, সরকারি অফিসগুলোর বকেয়া আদায়ে তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। এতে নানাভাবে চাপ বাড়ে সাধারণ গ্রাহকদের ওপর।
ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, সরকারি অফিসগুলোতে কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কীভাবে স্বাভাবিক থাকবে। সরকারি অফিস ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় আমরা বিস্মিত। আমাদের দাবি, এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে বিদ্যুৎ বিভাগ ও সাধারণ গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে সহযোগিতা করবে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী কালবেলাকে বলেন, সিটি করপোরেশনের কোনো বকেয়া নেই। এই বকেয়াগুলো প্রাক্তন পৌরসভার। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে কিস্তিতে তা পরিশোধ করা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক কালবেলাকে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে মানবিক দিক বিবেচনায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ব্যাপারে আমরা এসব প্রতিষ্ঠানে বারবার চিঠি দিয়ে তাগাদা দেওয়ার পরও অনেক প্রতিষ্ঠান বকেয়া পরিশোধ করছে না। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেব।