• ঢাকা শনিবার
    ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১
রাজশাহীর বাঘা

বাবার খুনের বিচার চেয়ে আ.লীগ নেতা বাবুলের ছেলের আবেগঘন স্ট্যাটাস

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৪, ১০:৫৩ এএম

বাবার খুনের বিচার চেয়ে আ.লীগ নেতা বাবুলের ছেলের আবেগঘন স্ট্যাটাস

রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যার এক সপ্তাহ পর তার ছেলে আশিক জাবেদ  ফেসবুক পেজে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি তার বাবার খুনির নাম উল্লেখ করে সরকারপ্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বুধবার রাত ১০টা ৫৭ মিনিটে পিতার ছবিসহ এ আবেগঘন স্ট্যাটাসটি দেন। বিভিন্নজন বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন তার স্ট্যাটাসে। 

এ আবেগঘন স্ট্যাটাসে ফকরুল হোসেন বিপ্লব লিখেছেন, খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আক্কাস মেরাজের ফাঁসি চাই। মিঠু আহম্মেদ লিখেছেন, দ্রুত বিচার চাই,,,। এসকে সাকিব লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন খুনিদের বিচার চাই। সায়েদ শরিফ লিখেছেন, খুনি আক্কাস ও মেরাজের বিচার চাই। 

রাজু আহমেদ লিখেছেন, বাবুল ভাইয়ের হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। ফিরোজা বেগম লিখেছেন, খুব কষ্টের কথাগুলো। এত ছোট বয়সে এতিম হওয়া যে কত কষ্টের তা শুধু পিতা হারানো সন্তানই জানে। বাবুল ভাইয়ের খুনিদের বিচার হোক এটা সবার দাবি হওয়া উচিত। 

নিলুফা ইয়াসমিন নিলু লিখেছেন, সঠিক বিচার দাবি করছি, রাজনৈতিক কোনো ফাঁকে যেন হত্যাকারী হারিয়ে না যায়।  হাফিজুর রহমান লিখেছেন, ভাই এমপি মহোদয়কে দিয়ে চেষ্টা করে বাবুল স্যারের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন।  ময়না খাতুন লিখেছেন, খুনিদের মুখোশ খুলে দিন। 

বাবুলের ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র আশিক জাবেদ যে আবেগঘন স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন তা হুবহু তুলেধরা হলো- 

একই ছাদের নিচে দুইযুগের বেশি সময় একসঙ্গে অবস্থান করা মানুষটি আজ নেই, যার হাত ধরে পথ চলতে শেখা হামাগুড়ি থেকে দৌড়ানো তারপর তার ছায়া তলে বেড়ে ওঠা সেই মানুষটি আজ অতীত, প্রতি মূহুর্তে অপলক দৃষ্টি সবখানে সবদিকে খুঁজে ফিরছে সেই প্রিয় মুখ, ব্যাকুল প্রাণে শুনতে স্বাদ জাগছে সেই কণ্ঠস্বর, কোথায় পাবো হারানো সে ধন? যা কেড়ে নিলো ঘাতকের দল।  তদন্তের আশ্বাস দিচ্ছে কেউ, কেউ সঠিক খুনি খুজছে আবার কারও কারও কাছে ঘটনাটি শুধুই বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র। এখানে তদন্তের কি আছে আর খুনির আবার সঠিক ভুল কি? সবাই দেখতে পাচ্ছে খুনি কারা। আক্কাস মেরাজ আর তার সঙ্গে থাকা জনোয়ারগুলোই খুনি খুনি খুনি- আর কিভাবে? আর কত জোরে? আর কার কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললে আপনারা শুনতে পাবেন এই সহজ কথাটি। হারানোর ব্যথা অন্যকেউ বুঝে না- কথার কৌশল আর অপরাধীদের শক্ত খুঁটিই কি তাহলে এই বিচারের বাধা? তাহলে কি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে এ নির্মমতার বিচার এভাবেই ঘুরপাক খেতে থাকবে। এরপর হইতো ষড়যন্ত্রের শিকার নির্দোষ ৩২ জনের মতো আমাকেও আসামি হতে হবে। লজ্জা ও ঘৃণার সঙ্গে ধিক্কার জানাই সেইসব মানুষদের যারা এ নৃশংস ঘটনার বিচার বন্ধ করতে বার বার শুধু বলছে যে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, কিন্তু একবারো বলছে না আক্কাস খুনি মেরাজ খুনি। এ আত্মচিৎকার, আহাজারি হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ কে দেখবে? আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই নারকীয় হত্যকাণ্ডের বিচার চাই। আমি এবং আমার নিষ্পাপ ভাইটাকে কোনো কারণ ছাড়া এতিম করে দেওয়ার বিচার চাই। আপা, আপনিই বোঝেন আপনজন হারানোর ব্যথা। জাতির পিতা এবং আপনার আজীবনের একজন আদর্শিক সৈনিক ছিলেন আমার বাবা, কোনোদিন তিনি আদর্শচ্যুত হননি। অন্যদল ক্ষমতায় থাকলে মেনে নিতাম ভাগ্যকে কিন্তু এই ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে তার দলের একজন সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামী লীগ সেজে থাকা স্বার্থপর বেইমানরা যে ভাবে খুন করল আবার তার বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে, তার আদর্শই কি জীবনের কাল হলো? আওয়ামী লীগ করলেই কি সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বাড়ি থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হয়? এ অন্যায়ের বিচার আপনার কাছে চাই আপা। আমি আমার মাসুম ভাই এবং অসহায় মায়ের চোখের পানির বিচার চাই, আমি পিতা হত্যার বিচার চাই, খুনি আক্কাস মেরাজের ফাঁসি চাই।

এ বিষয়ে বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বেবি বলেন, ‘আমার স্বামীকে নিয়ে কোনো অপরাজনীতি হোক, এটা আমি চাই না। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রকৃত খুনিদের বিচার চাই।’ 

গত ২২ জুন বাঘা উপজেলা পরিষদ চত্বরের সামনে সকাল ১০টায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলা চালান আক্কাছ আলীসহ তার ক্যাডার বাহিনী। এ সময় আহত হন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলসহ অন্তত ৫০ জন।  রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৬ জুন বিকালে তার মৃত্যু হয়। এ মামলার প্রধান আসামি আক্কাছ আলী। এতে ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত করে দ্রুত বিচার আইনে যুবলীগ নেতা শাহিনুর রহমান পিন্টু বাদী হয়ে মামলা করেন। 

আর্কাইভ