প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম
মিয়ানমার অংশে চলমান সংঘর্ষ ও সংঘাতে অস্থিরতায় আতঙ্কিত এ দেশের তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্তের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে। ১১ দিন পর তারা ধীরে ধীরে বাড়ি-ঘরে ফিরছেন। কেননা এ সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবেশ অনেকটা শান্ত-স্বাভাবিক।
ফিরে আসা লোকজন নিজেদের দোকান-পাট খুলেছেন, খেত-খামারেও ফিরেছেন। এছাড়া পড়ে থাকা সব কাজে মনোযোগী হয়ে পড়েছেন তারা।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সীমান্তে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরকান আর্মির তুমুল সংঘর্ষে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় এপারের ১৩ গ্রামের কয়েক হাজার অধিবাসী বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
এদেরই একজন হলেন তুমব্রু কোনারপাড়ার বাসিন্দা হাফেজ আবুল কালাম। তিনি বলেন, দীর্ঘ ২ মাস ধরে তারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তবে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের সঙ্গে আরও অনেক লোক চলে যান নিরাপদ আশ্রয়ে। তারা সবাই ফিরে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, তারা মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। বাড়ি ফিরে দেখছেন সবই তছনছ করা অবস্থায় রয়েছে। আবার নতুনভাবে সব গোছাতে হবে।
সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলারের পাশের এপারের গ্রাম হেডম্যানপাড়া। এ পাড়ার হেডম্যান অংকিছাফু তংচঙ্গা বলেন, তিনি হেডম্যান ঠিকই, তবে অসহায়। কেননা তার বাড়ির ১শ গজের মাথায় মিয়ানমারের মেধাইক সীমান্ত চৌকি। যেটিতে বর্তমানে অবস্থান করছেন বিদ্রোহী আরকান আর্মি। এ ক্যাম্প নিয়ে ২ মাস আগে শুরু হয় দখল-বেদখল নিয়ে গোলাগুলি-তুমুল সংঘর্ষ। সর্বশেষ এ ক্যাম্প দখলে নেয় মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরকান আর্মি (এএ)।
সংঘাতের জন্য দীর্ঘ ২ মাস তারা খেত-খামারে যেতে পারছিলেন না। তার পাড়ার লোকজন বেকার হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। কাজকর্মও নেই এখন। তিনি হেডম্যান হিসেবে এ সীমান্তবাসীর কাছে মানবিক সহায়তার দাবি তুলেন সরকারের কাছে।
তুমব্রু বাজারপাড়ার বাসিন্দা আশীষ কুমার, তুমব্রু পশ্চিম কূলের বাসিন্দা আবুল কালাম, জলপাইতলীর ছৈয়দ আলম, ঘুমধুমের শফিক আহমদসহ সীমান্তের অনেকে একই কথা বলেন এই প্রতিবেদককে। তারা এই এলাকাকে দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা চান সরকারের কাছে।
ঘুমধুম ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার খালেদা বেগম জানান, গোলাগুলি থেমে গেলেও আতঙ্ক কমেনি এ সীমান্তে। তবুও মানুষ বাড়ি ফিরেছেন পেটের তাগিদে।
গ্রামপুলিশ জাব্বার বলেন, গোলাগুলি থামলেও অস্থিরতা থামেনি। মানুষ দারুণ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। অনেকের পেটে ভাত নেই; মাঠে কাজ নেই।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্ত এখন ঠান্ডা। মানুষ বাড়িঘরে ফিরেছেন। কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তবে তারা দীর্ঘ সময় বাড়ি-ঘর ছেড়ে থাকার কারণে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। এখন ঘুমধুম-তুমব্রু-বাইশফাঁড়ি সীমান্তে গোলাগুলি প্রায় বন্ধ।