প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪, ০৭:০৭ এএম
চট্টগ্রামের ডা. জাকির হোসেন সিটি করপোরেশন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে টাকা দিলেই মিলছে হোমিও চিকিৎসার সনদ। সাধারণত যারা ইন্টার্ন শেষ করেন তাদের একটি ‘রোগীলিপি’ জমা দিতে হয়।
কিন্তু টাকার বিনিময়ে সেই রোগীলিপি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ লিখে দেওয়া হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থী ইন্টার্ন না করেও টাকার বিনিময়ে যেমন উত্তীর্ণ হচ্ছে, তেমনি পরীক্ষা না দিলেও অন্য শিক্ষার্থীর মাধ্যমে প্রক্সি (অন্যের হয়ে আরেকজন পরীক্ষা দেওয়া) দিয়ে পাস করানো হচ্ছে।
এমন সব অভিযোগ পাওয়া গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির খোদ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গত এক যুগ ধরে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসাবে রয়েছেন ডা. নুরুল আমিন। এর মধ্যে গত ১০ বছরের অডিট প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডে।
প্রতিষ্ঠানের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিলেও সেই টাকা জমা রাখা হচ্ছে অধ্যক্ষের পৃথক একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সাবেক এক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) অভিযোগও জমা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, ডা. জাকির হোসেন সিটি করপোরেশন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। কলেজের চারটি বর্ষে দিবা/রাত্রি মিলিয়ে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিনিয়ত নানা খাতে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কলেজের ক্যালেন্ডার, প্রবেশপত্র, সাময়িক সনদসহ অনুপস্থিতিজনিত কারণ দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়। কলেজ অধ্যক্ষের নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে ১৮ জানুয়ারি চসিকের কাছে অভিযোগ দেন ডা. মনিরুল ইসলাম।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, অধ্যক্ষ ডা. নুরুল আমিন ২০১২ সালে নিয়োগের পর থেকে বিভিন্ন কায়দায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। যেসব শিক্ষার্থী ইন্টার্ন করেনি তাদের কাছ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা করে আদায় করেছেন। কলেজের অফিস সহকারী শ্যামল শিক্ষার্থীদের কাছ এসব নিয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। এ ধরনের টাকা চসিকের অগোচরে অধ্যক্ষের অগ্রণী ব্যাংকের ফিরিঙ্গী বাজার শাখায় রাখছেন।
ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ডা. জাকির হোসেন সিটি করপোরেশন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক শিক্ষার্থী। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খারাপ কিছু শুনলে মেনে নিতে কষ্ট হয়। এ কারণেই অধ্যক্ষের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখার ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, সেখানে (চসিকের হোমিও কলেজে) এখন টাকার বিনিময়ে সনদ বেচাকেনা চলছে। এর সঙ্গে অধ্যক্ষ নিজেই সরাসরি জড়িত রয়েছেন। কলেজের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেছেন, অসাধু উপায়ে টাকা অগ্রণী ব্যাংকের পৃথক একটি হিসাব নম্বরে রাখা হয়। সেই ব্যাংক হিসাব তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।’
১০ বছর ধরে হিসাব বিবরণীর প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে না : বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডে ১০ বছর পর্যন্ত হিসাব বিবরণীর প্রতিবেদন বা অডিট প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের রেজিস্ট্রার-কাম-সেক্রেটারি ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন ও বোর্ড প্রদত্ত সরকারি অনুদানের টাকার হিসাব দাখিল করতে বলা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিবরণীর প্রতিবেদন (বিল-ভাউচারসহ) বোর্ডে পাঠানো হয়নি। এ বিষয়ে বিগত সময়েও পত্র পাঠানো হয়েছিল। এমন অবস্থায় এক মাসের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদনক্রমে বোর্ডে প্রেরণের জন্য বলা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি অভিযোগকারীর সঙ্গে অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেটিকে কেন্দ্র করেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। তার পরও অভিযোগ যেহেতু উঠেছে, সেটি তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে অধ্যক্ষ ডা. নুরুল আমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া না দেওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।