দেশজুড়ে ডেস্ক
জন্ডিসে ভুগছিলেন ইরফান উদ্দিন (৩০)। বাড়িতেই থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি হলে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন এই যুবক।
ইরফানের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে মঙ্গলবার বিকেলেই তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর ওইদিনই রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে মারা যান তিনি। পরে মৃতের পরিবার রাতেই তার লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
পারিবারিকভাবে সামাজিক কবরস্থানে ইরফানকে সমাহিত করার উদ্যোগ নেয় তার পরিবার। এ জন্য সমাজের মসজিদের সভাপতি আক্কাস আলীর বাড়িতে যায় নিহতের স্বজনেরা। ডাকাডাকি করলেও বাড়ির বাইরে বের হননি ওই সভাপতি। পরে সমাজের মসজিদের ইমামের অনুমতি নিয়ে খাটিয়া নিয়ে আসে তারা।
বুধবার সকালে এ খবর পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে আক্কাস আলী। মসজিদের চাঁদা বাকি থাকার কথা বলে নিহতের লাশ রেখে খাটিয়া নিয়ে আনতে বলেন তিনি। এমনকি লাশ সামাজিক কবরস্থানে দাফন করতে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। সমাজের ইমামকে জানাজা না পড়ার জন্য বলে আসেন আক্কাস আলী। মৃত ব্যক্তির নামে মসজিদের মাইকে মাইকিং পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি।
লাশ দাফন নিয়ে চিন্তায় পড়ে নিহতের পরিবার। পরে পার্শ্ববর্তী এলাকার মসজিদ থেকে খাটিয়া এনে রাস্তার পাশে অন্যের পারিবারিক কবরস্থানে ইরফানের লাশ দাফন করা হয়।
ঘটনাটি বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইয়াংছা বদুরঝিরি এলাকার। বুধবার সকাল ৯টায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় নিন্দার ঝড় ওঠে।
অভিযুক্ত আক্কাস আলী বদুরঝিরি এলাকার নুরুল আলমের ছেলে। আর নিহত ইরফান ওই এলাকার আকবর এর ছেলে।
নিহতের শ্বশুর কবির আহাম্মদ বলেন, 'আমরা খাটিয়া ও লাশ দাফনের জন্য মঙ্গলবার রাতেই সভাপতির বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি দরজা খুলেননি। পরে ইমামের অনুমতিতে খাটিয়া আনলেও তা তিনি সকালে লোক দিয়ে নিয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে আমরা অন্যের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করি।'
এ বিষয়ে বদুরঝিরি মসজিদের সভাপতি আক্কাস আলী জানান, দুই বছর আগে ইরফান ও তার শ্বশুরকে সমাজ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তারা সমাজের কোনো ধরনের চাঁদা দেয়নি। এই কারণে আক্কাস আলীকে সমাজের কবরস্থানে দাফন করতে দেয়নি।
তবে এলাকাবাসী বলেছেন, ইরফান খুব ভালো ও ভদ্র ছেলে ছিল। তার থেকে চাঁদা এত পাবে না। আর যদিও মসজিদের চাঁদা বকেয়া থাকে সেটা পরে দেখা যেত। আগে লাশ দাফন করতে দেয়া দরকার ছিল।
এ ঘটনার পর এলাকার যুব সমাজ ও নিহতের শ্বশুর কবির আহাম্মদ বিষয়টি ইয়াংছা আর্মি ক্যাম্প কমান্ডারকে জানালে বিষয়টি সমাধানে বিকাল ৫টায় বসার কথা জানান তিনি। তবে বিকাল ৫টায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হলেও মসজিদ সভাপতি আক্কাস আলী উপস্থিত হয়নি। তাকে একাধিকবার কল করার পরেও সে ক্যাম্পে আসেনি।
এ বিষয়ে ইউপি মেম্বার কামাল উদ্দিন বলেন, 'আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইয়াংছা বদুরঝিরি মসজিদে সবাইকে নিয়ে বসে সমস্যাটির সমাধান করা হবে। সমাজে বিষয়টি সমাধান না হলে লামা থানায় অভিযোগ করবো।'
মামুন
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন