প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩, ০৬:৫৪ পিএম
নওগাঁর রাণীনগরে জাল দলিলের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রায় ৮ শতাংশ জমি খারিজ (নামজারি) করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। খারিজের পর ওই জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি একটি প্রতারক চক্রের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জাল দলিলের মাধ্যমে এই খারিজটি আবদুল কুদ্দুসের নামে করা হয়েছে। বর্তমানে জমির প্রকৃত মালিক ও দাবিদারের দুপক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এই ঘটনায় জমির ওয়ারিশ ও ক্রয়সূত্রে ৫ জন মালিক একযোগে আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে জাল দলিলের মাধ্যমে তথ্য গোপন করে এবং ভুয়া তথ্য দিয়ে জমি খারিজ করে নেওয়ার অভিযোগ এনে ৯ নভেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে। ডিজিটাল যুগের এমন ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনায় ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ভীতের সঞ্চার হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চককুতুব মৌজায় সফেজান বিবি ও মছিরন বিবির নামে ১৮৪, ১৪২, ১৪৩ নম্বর আরএস খতিয়ান প্রস্তুত আছে। ওই খতিয়ানের জমির ওয়ারিশ এবং দলিল মূলে জাছের আলী, আব্দুস সাত্তার, শাহাদ আলী সরদার, আহাদ আলী সরদার ও আজিজুল ইসলাম মালিক বলে দাবি করা হয়েছে। তারা সবাই বছরের পর বছর ওই খতিয়ানের জমিগুলো ভোগদখল করে আসছেন। এর মধ্যে সম্প্রতি ওইসব সম্পত্তির খাজনা-খারিজের জন্য সংশ্লিষ্ট তহসিল অফিসে গেলে মালিকরা জানতে পারেন তাদের জমির মধ্যে থেকে রাণীনগর-আত্রাই সড়ক সংলগ্ন প্রায় ৮ শতাংশ জমি চককুতুর গ্রামের ময়েন উদ্দীন মন্ডলের ছেলে আব্দুল কুদ্দুসের নামে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে খারিজ (নামজারি) হয়।
এরপর আব্দুল কুদ্দুসের হওয়া খারিজের আবেদনের তথ্য সংগ্রহে নামে জমির প্রকৃত মালিকরা। একপর্যায়ে তারা আব্দুল কুদ্দুসের ভূমি অফিসে দাখিল করা রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ১৯৮৮ সালের দলিল নম্বর ৬৮১৫ এবং ৬৩৬০ দলিল পান। এরপর কুদ্দুসের দাখিল করা দুই দলিলের জাবেদা কপি রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তুলতে গিয়ে বেরিয়ে আসে এই জালিয়াতির চিত্র।
অভিযোগকারী জাছের আলীসহ অন্যরা জানান, আমরা রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সম্প্রতি আব্দুল কুদ্দুসের ৬৮১৫ নম্বর দলিলের জাবেদা কপি (নকল) তুলে দেখি জাবেদার সাথে কুদ্দুসের দলিলের কোনো মিল নেই। দলিলের দাতা, গ্রহীতা, মৌজা এমনকি জমিরও কোনো মিল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কুদ্দুসের ৬৩৬০ নম্বর দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে পাওয়া যাচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, একটি প্রতারক চক্রের মাধ্যমে আবদুল কুদ্দুস জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আমাদের জমির খতিয়ানের দুই মালিক সফেজান বিবি এবং মছিরন বিবিকে দাতা বানিয়ে এবং কুদ্দুস নিজে গ্রহীতা সেজে দুটি জাল দলিল তৈরি করেছেন। সেই দুটি জাল দলিল দিয়ে ও তথ্য গোপন করে আমাদের প্রায় ৮ শতাংশ জমি কুদ্দুস ভূমি অফিস থেকে খারিজ করে নিয়েছে। এ ঘটনায় আমরা ওই খারিজ বাতিলসহ কুদ্দুসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত আব্দুল কুদ্দুসের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। বার বার জানার চেষ্টা করলেও তিনি কোনো কথা বলেননি।
এই বিষয়ে হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, আব্দুল কুদ্দুস সম্পর্কে আমার ফুফাতো দুলাভাই। সেই সূত্রে ওই এলাকায় আমার যাওয়া-আসা। কুদ্দুস দুলাভাই আমার কাছে জমির খারিজ করার কাজে সহযোগিতা চেয়েছিল বলেই আমি তাকে একটু সহযোগিতা করেছি মাত্র। একটি কুচক্রীমহল আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য আমার বিষয়ে এমন মিথ্যে অভিযোগ তুলেছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে আব্দুল কুদ্দুসের নামে ৭.৯৪ শতাংশ জমি নামজারি করা হয়েছে। তার দাখিল করা দলিল যে জাল সেটা আমাদের জানা ছিল না। ওই জমির মালিক দাবি করে ৫ জন ব্যক্তি খারিজ বাতিলের জন্য আবেদন এবং জাল দলিল দিয়ে খারিজ করে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে জালিয়াতি প্রমাণ হলে খারিজ বাতিলসহ আবদুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/