প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৩, ০৭:০২ পিএম
বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর দূষিত পানি মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় ভরা মৌসুমেও পদ্মায় মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মাছ। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর পারে গড়ে উঠেছে একাধিক শিল্প কারখানা যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে।
ওই সমস্ত কারখানার বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে মেঘনা ও এর শাখা নদীগুলোতে। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে নদী দূষণ যার কারণে কমেছে ইলিশ মাছের সংখ্যা।
মুন্সীগঞ্জ মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গবেষণা বলছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার দূষণ নদীর নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এখন মেঘনার মোহনা পর্যন্ত এ দূষণ পৌঁছে গেছে। দূষণের কারণে সাগর থেকে ইলিশ মাছ নদীতে আসছে না। তাছাড়া নদীতে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে প্রতিনিয়তই দূষণ বাড়ছে যার কারণে এ মৌসুমে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও পদ্মা নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না।
তাছাড়া মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদী দিয়ে অবাধে চলছে বালুবাহী বাল্কহেড। গত কয়েক বছর যাবৎ পদ্মা সেতু এলাকা থেকে বালু নিয়ে এ সমস্ত বাল্কহেড পদ্মা নদী দিয়ে যাতায়াত করছে এতে পদ্মায় কমেছে ইলিশের পরিমাণ। জেলেরা দিনের পর দিন জাল ফেলেও দেখা পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশের। অন্যদিকে নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে কমছে প্রজনন ক্ষেত্র, অবৈধ কারেন্ট জাল ও পদে পদে বাঁধায় জেলেদের জালে দেখা মিলছে না ইলিশের। এতে হতাশায় দিন কাটছে জেলেদের। ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে এখন কিন্তু জালে ধরা না পড়ায় নিরাশ জেলেরা।
জেলেদের দাবি পদ্মা নদীর গভীরতা কমেছে, পদ্মা নদী দিয়ে অবাধে বালুবাহী বাল্কহেড চলছে ও পদ্মা নদীর মুখে ভাষানচরে নাব্যতা সংকটের কারণে ইলিশ পদ্মা, মেঘনায় আসতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছে নদী দূষণ, প্রতিকূল আবহাওয়া, নদীর আয়াতন বেড়ে যাওয়ায় জেলেরা নদীতে জাল ফেলতে না পারায় মাছ পাচ্ছে না।
লৌহজং উপজেলার জেলেদের মহাজন রুহুল আমিন দেওয়ান বলেন, পদ্মা নদীর প্রধান মুখ ভোলার ভাষানচর। এই মুখ দিয়ে সাগর থেকে ইলিশ মাছ উঠে আসে। আর ওই জায়গাটায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে মাছগুলো। ওইখানে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। ইলিশ মাছ চলাচলের জন্য পানির প্রয়োজন ৪০ থেকে ৫০ হাত। সেখানে ওই স্থানে মাত্র ৫ থেকে ৭ হাত পানি রয়েছে। সেখানে আবার বিপজ্জনকভাবে জাল ফেলে রাখা হয়। ওই জাল ডিঙিয়ে মাছ আসার সুযোগ নেই। এতে মাছগুলো বাধা পেয়ে আবার সাগরে ফিরে যায়। তারপরেও মাছ আসতে পারতো কিন্তু কারেন্ট জাল ও ওয়ান ফ্লাক নামে আরও একটি নতুন জালের কারণে মাছ ওইখানে আটকে যাচ্ছে। এই ওয়ান ফ্লাক জালটি খুব মারাত্মক। এই জন্য মাছগুলো আর বের হতে পারছে না। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার ১৪টি ট্রলার রয়েছে। এতে প্রায় শতাধিক জেলে কাজ করে। বর্তমানে আমরা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছি। কোনো মতে জীবন পার করছি। আমাদের দাবি ভাষানচর এলাকায় নাব্যতা ফিরে আনা, কারেন্ট জাল ও ওয়ান ফ্লাক জাল নদী থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা।
আরও একজন মহাজন ইলিয়াছ শিকদার বলেন, পদ্মা নদীতে গভীরতা কমে গেছে। যেখানে ইলিশ গভীর জলের মাছ। সেখানে নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় ইলিশের দেখা মিলছে না। এছাড়া সাগরে এখন প্রচুর পরিমাণে জাল ফেলা হয়। এসবের কারণে জাল ভেদ করে মাছ আসতে পারছে না। হাতিয়া, ভোলা ওইসব এলাকায় কারেন্ট জাল ব্যবহার করার কারণেই মাছ নদীতে প্রবেশ করতে পারছে না। তাই ইলিশের সংকট দেখা দিয়েছে। আমার ৪টি মাছ ধরার ট্রলার আছে। প্রায় ৫০ জন জেলে কাজ করে। বর্তমানে তারা কোনো রকমভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে।
মাওয়া মৎস্য আড়তের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাল বলেন, কয়েক বছর আগে মাওয়া ঘাটে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হতো। কয়েক বছর ধরেই এরকম বাজার আর পাচ্ছি না। পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলেও ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে বাধা হচ্ছে। ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। একে রক্ষা করা উচিত। সরেজমিনে গত শুক্রবার ভোরে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে ইলিশ মাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ফলে আড়ৎদারদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
লৌহজং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ নেই বিষয়টা এরকম না। অন্যান্য বছর যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যায় এখনও ওই পরিমাণ ইলিশ আছে। এই সময়টিতে পানির পরিমাণ বেশি ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জেলেরা জাল ফেলতে পারছে না। এজন্য মাছ ধরা পড়ছে না। এছাড়া নদীর আয়তন বেড়ে গেছে। জেলেরা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জাল ফেলতে না পারায় ইলিশের দেখা মিলছে না।
মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ.টি.এম তৌফিক মাহমুদ বলেন, গবেষণা বলছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ নদীর নিচে নেমে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দূষণের কারণে সাগর থেকে ইলিশ মাছ নদীতে উঠে আসছে না। তাছাড়া নদীতে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যত বেশি যানবাহন নদীতে চলাচল বাড়বে ততবেশি দূষণও বাড়বে এই দূষণের কারণেই মূলত পদ্মা নদীতে ইলিশের সংখ্যা কম। তাছাড়া নদীর নাব্যতা ও চর পরাও একটা কারণ হতে পারে।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/