প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৩, ১২:০০ এএম
আমাদের যাবতীয় ভালো থাকা, মন্দ থাকা অনেকটাই মস্তিষ্কের সক্রিয়তার উপরে নির্ভরশীল। মস্তিষ্ক যতটা চাঙ্গা থাকবে, সময়টা ঠিক ততটাই সুন্দর হবে। চা নামের পানীয় রয়েছে, যা মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে।
কাজে ঠিক মন বসছে না, এক কাপ চা এর জন্য যথেষ্ঠ। মাথা ঝরঝরে হবে, কাজেও মনোনিবেশ। সকাল, বিকাল কিংবা সন্ধ্যা- চা ছাড়া জমেই না যেন। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা- এককাপ চা না হলে সবকিছুই বেমানান যেন। চা পানের উপকারিতার বিষয়টা হয়তো কোনো না কোনোভাবেই জানতে পেরেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের আড়িয়া গ্রামের একটি গরু। চার পায়ের এই প্রাণীটি তিনমাস বয়স থেকেই নিয়মিত চা-পান করে হতবাক করেছে স্থানীয়দের। নিয়ম করে দোকানে এসে চা পান করে গরুটি। আর দোকানী চা দিতেই দেরী করলেই গরুটির অসংলগ্ন আচরণ শুরু করে। চা-খোর নাটকের কাহিনিকে হার মানিয়ে চুয়াডাঙ্গার তিতুদহ ইউনিয়নের ৬২নং আড়িয়া গ্রামের দিনমজুর লাল্টুর গরুটি সেই রকম চা-খোর গরুর তকমা পেয়েছে।
প্রায় আড়াই বছর যাবত এই গরুটিকে লালন পালন করছেন দিনমজুর লাল্টু। জন্মের তিনমাস বয়স থেকেই এই চায়ে আসক্ত গরুটি চায়ের পাশাপাশি পাউরুটি, কলা ও বিস্কুটও খায়। গরুটির এমন আচরণে বিষ্মিত এলাকাবাসী। তবে কেউ বিরক্ত নই, মানুষের সাথে সাথে দোকানে দাঁড়িয়ে সবার সাথে চা খাওয়ার দৃশ্য উপভোগও করেন অনেকে।
গরুর মালিক দিনমজুর লাল্টু শেখ বলেন, এই গরুটি আমার খুব প্রিয়। গরুটি যখন বাছুর ছিলো, সেই তিন মাস বয়স থেকেই ওকে চা-পান করাই। আজ দুই বছরেরও বেশি সময় প্রতিদিন আছর নামাজের পর নিয়ম করে চা খায়। সকালে পালের সাথে মাঠে ঘাস খেতে যায়। কিন্তু বিকেলে যখন ফেরে, তখন অন্য গরুগুলো বাড়িতে ঢুকলেও এই গরুটি সোজা দোকানে চলে আসে এবং চায়ের চুলার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি যতক্ষণ চা না দিই, ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। চা দিতে দেরী করলে হাম্বা হাম্বা করে ডাকে, অন্যরকম অংগভংগি করে।
লাল্টু আরও বলেন, গরুটির এখন একটি বাছুর আছে। সে এখন বাছুর সাথে করেই দোকানে আসে। তবে বাছুরটি চা খায় না। মাঝেমধ্যে পাউরুটি, কলা ও বিস্কুট খায়। দোকানে থাকা অন্যান্য কাস্টমারদের কোনো সমস্যা করে না গরুটি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সালাম চা পান করেন এই দোকানে। তিনি বলেন, আমি ব্যবসার প্রয়োজনে এই রাস্তা দিয়ে প্রায় আসা যাওয়া করি। এই গরুর মালিক লাল্টু ভাই একজন দোকান ও মুরগী ব্যবসায়ী। আমার সাথে ভালো সম্পর্ক। মাঝে মাঝে দেখি, লাল্টু ভাইয়ের দোকানে গরু দাঁড়িয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করি, এখানে গরু কেন? উত্তরে লাল্টু ভাই বলে, ভাই এই গরু চা খাবে। আমি স্বচক্ষে কয়েকদিন দেখলাম। মাঠ থেকে এসে সব গরু বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়। কিন্তু এই একটা গরু দোকানে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে জানতে পারি চা খাবে, এটা চা-প্রেমী গরু। আমরাও দোকানে বসে চা খাই, আমাদের সাথে এই গরুও চা খায়। আর আশ্চর্য হই। আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা করি। আমি কোথাও এমন গরু দেখিনি। এটাই মনে হয়, বাংলাদেশের একমাত্র চা-প্রেমী গরু।
একই গ্রামের বাসিন্দা কলেজছাত্র নয়ন বলেন, আমি প্রতিনিয়ত লাল্টু কাকার দোকানে চা খেতে আসি। মানুষ যেমনভাবে চা খায়, ঠিক একইভাবে এই গরুটাও সেভাবে এসে দাঁড়াই। আমরা যেমন চা খাওয়ার জন্য বসে অপেক্ষা করি, গরুটাও ওখানে এসে দাঁড়াই। যদি চা না পায়, তাহলে দোকানদারকে বিরক্ত করে। চা দেওয়ার জন্য দোকানদারের মনোযোগ কাড়ার চেষ্টা করে। দোকানদার চা যখন দেয়, গরুটি চা খেয়ে মানুষের মতো শান্তশিষ্ট হয়ে বাড়ির দিকে চলে যায়। কিন্তু চা না দিলে জোরে ডাকে, অসংগতিপুর্ণ আচরণ করে। আসলেই বিষয়টি খুব আশ্চর্যের। কারণ ওখানে প্রায় ২০-২৫টি গরু আসে, কোনো গরু চায়ের দোকানে আসে না। শুধু একটি গরু আসে।
গরুর মালিকের স্ত্রী নেহারণ খাতুন বলেন, আমার স্বামীর খুব প্রিয় গরু এটা। গরুটাকে আমরা ঘাসসহ অন্যান্য সব খাবারই দিই। কিন্তু প্রতিদিন নিয়ম করে গরুটিকে চা খাওয়াতে হয়, তা নাহলে গরুটি প্রচুর অশান্তি করে। এমন চা খাওয়া গরু আমি আর দেখিনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, চা মূলত গরুর খাদ্য না। এছাড়া এই গরম চায়ের সাথে কোনো পশুই পান করে না। তবে এই গরুটি প্রায় দেড়-দুই বছর গরম চা পান করে আসছে শুনেছি। এটা গরুটির একটা রোগ বলতে পারেন। তবে চায়ে কোন ক্ষতি নাই।