প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৩, ০৩:৩১ এএম
কলোনির দেয়ালগুলো যেন ছবির মতো। বাহারি সবুজ গাছ, ফাঁকে ফাঁকে হরেক রঙের ফুল। দেয়ালের নান্দনিকতার সুরভি ছাড়াচ্ছে পুরো এলাকা। এ যেন অন্য এক ভুবন, অন্যরকম ভালোলাগা। অথচ ক’দিন আগেও কলোনির সড়কজুড়ে আবর্জনায় মানুষের চলা ছিল দায়। কিন্তু ছোট্ট একটি উদ্যোগ পাল্টে দিয়েছে কলোনির চিত্র। চিত্রকরের ছবিকেও যেন হার মানায় ময়মনসিংহ নগরীর বাঁশবাড়ি কলোনির দেয়ালগুলো। স্থানীয়দের কাছে বাঁশবাড়ি কলোনি এখন সবুজ কলোনি।
ময়মনসিংহ নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি এলাকা বাঁশবাড়ি কলোনি। এই কলোনিতে নিম্ন আয়ের মানুষের বাস। সম্প্রতি কলোনির ভেতরের ভাঙা সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করেছে সিটি কর্পোরেশন। সংস্কারের পর আবর্জনায় নোংরা হয়ে থাকা নতুন সড়ক ও ড্রেন ঝকঝকে হয়েছে। ঝকঝকে এলাকাটিকে টিকিয়ে রাখতে সড়কের এক হাজার ফুট এলাকাজুড়ে দেয়ালগুলোতে বাগান করার পরিকল্পনা শুরু করেন কয়েকজন বাসিন্দা। অবশ্য কলোনির বাসিন্দা মুরাদ হাসান কানন গত তিন বছর আগেই তার বাসায় সবুজায়ন শুরু করেন। সড়কঘেঁষা বাগান থেকেই পুরো এলাকাটিকে নান্দনিক করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা শুরু হয়। তারপর কাননের সঙ্গে যুক্ত হন মেহেদী হাসান মুহিত, সাইফুল ইসলাম ও উত্তর সরকার। চারজন মিলে কলোনির বাসিন্দাদের নিয়ে করেন বৈঠক। নিজের এলাকাকে সুন্দর রাখতে, আগামী প্রজন্মকে সুন্দর মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে দেয়ালগুলোতে সবুজায়ন করার পরিকল্পনায় সাধুবাদ জানান বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত তিন মাস আগের ছোট এই উদ্যোগে এখন ৮০০ ফুট সড়কের দুই পাশ হয়ে উঠেছে নান্দনিক। ঘরের অব্যবহৃত ও ভাঙা ঝুড়ি, বালতি, মগ নানা কিছুকে করা হয় টব। তার দিয়ে সেগুলোকে দেয়ালে আটকানোর ব্যবস্থা করে তাতে লাগানো হয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। গাছগুলোর কোনোটি পাতায় সৌন্দর্য, কোনোটি সুরভি ছড়াচ্ছে ফুলে। রাতের হাসনাহেনা মোহিত করে পুরো এলাকা। আবর্জনার তীব্র গন্ধ এখন আর নেই। অথচ ক’দিন আগেও আবর্জনার গন্ধে যে এলাকায় টেকা দায় ছিল, সে এলাকায় এখন ফুলের সুরভি ছড়ায়।
কলোনির বাসিন্দারা জানান, গাছগুলোকে টিকিয়ে রাখতে ছোট-বড় সবাই খুবই উদ্যোগী। সবাই নিজেদের এলাকার বাগানকে বড় করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অনেকে এখন ছুটে যান সেখানে উদ্যোগটি দেখতে, ছবি তুলতে। এতে খুশি এলাকার শিশু-কিশোররাও।
বেদেনা আক্তার নামের এক স্থানীয় সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, আগে রাস্তা ভালো ছিল না। দুই পাশে সবাই ময়লা ফেলত। এখন রাস্তাও সুন্দর হয়েছে এবং দেয়ালগুলোতে গাছ লাগিয়ে সুন্দর করা হয়েছে। এতে কলোনির চেহারাই পাল্টে গেছে।
উদ্যোক্তাদের একজন মুরাদ হোসেন কানন সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, কলোনি নিয়ে মানুষের ধারণা পাল্টে দিতে, আগামী প্রজন্মকে সুন্দর নগরী উপহার দিতে এবং পরিবেশকে সুন্দর রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার গাছ ঝুলছে দেয়ালে দেয়ালে। অনুপ্রাণিত হয়ে প্রত্যেকেই এখন গাছ কিনে এনে ঘরের সামনে ও সড়কে লাগাচ্ছেন।
উত্তম সরকার নামের আরেকজন সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ইচ্ছে থাকলেই যে একটি কলোনির চিত্র পাল্টে দেওয়া যায় এটিই তার প্রমাণ। নতুন প্রজন্ম নতুনভাবে বেড়ে উঠবে। তারাও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, এলাকাটির বাসিন্দারা মডেল হিসেবে নিয়ে দেয়ালগুলোকে বাগানে রূপ দিয়েছেন। এটি শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয়। ইচ্ছা থাকলেই চারপাশের পরিবেশ সুন্দর রাখা সম্ভব। আমরা আশা করব নগরীর বাসিন্দারা তাদের বাসা বা এলাকাকে সবুজ ও ফুল দিয়ে সাজিয়ে তুলবেন। তাতে সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব নগর গড়ে তোলা সম্ভব।
বিএস/