প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৩, ০৬:০৯ পিএম
কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. দিদারুল আলমকে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঝিলংজার চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে অভিভাবকসহ স্থানীয়রা তাকে স্থায়ী বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন।
খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক কর্তৃক স্বাক্ষরিত পত্র থেকে জানা যায়- অফিস সহকারী দিদার ও এক নারীর সাথে ভিডিও কলে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়।
দিদার আর ওই নারীর মধ্যে ফাঁস হওয়া ভিডিও ক্লিপে উ’লঙ্গ হয়ে যেভাবে যৌ’ন ক্রিয়া সম্পাদন করেছে তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন কমর্চারী হিসেবে যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার পরিপন্থী। বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির জরুরি মিটিংয়ের প্রস্তাবে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এছাড়াও তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা ১০ কর্যদিবসের মধ্যে করণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষক সমাজসহ বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যকার সম্পর্কের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করেছেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, নাশকতা মামলার দাগী আসামিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, ক্রয়-বিক্রয়ে নয়ছয়, শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন ও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ কারণ ছাড়াই শিক্ষকদের পাওয়া সম্মানী কেটে নেওয়া এমন অভিযোগের অন্ত নেই প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকের বিরুদ্ধে। স্কুলের প্রধান হয়েও একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়াচ্ছেন তিনি। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্যের পাশাপাশি অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
এছাড়া, একসময়ের বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে দলীয় গ্যাং ভারী করে দলীয় প্রভাব ব্যবহারের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষকের নিকট আত্মীয় অভিযুক্ত দিদার। একারণে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রধান উৎস হিসেবে তিনি কাজ করার পাশাপাশি তার বিশ্বস্ত তল্পিবাহক হিসেবে প্রচার রয়েছে। একারণে স্কুলটির নানা সমস্যা যেন ‘অদ্ভুত অন্ধকার’ গ্রাস করতে যাচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মকে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে অফিস সহকারী দিদার জানান, কিছু সত্যের সাথে জঘন্য মিথ্যাচারের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। ফলে তার জীবন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তার সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে একটি চক্র ভিডিও এডিট করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় নেমেছেন।
বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, আজ সকাল ১১টার দিকে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। যেহেতু ভিডিওটি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেখেছি তাই স্কুল কমিটিসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে অফিস সহকারী দিদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইসমাইল বলেন, ম্যানেজিং কমিটির উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে অভিযুক্ত অফিস সহকারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কাম হিসাব সহকারী মো. দিদারুল আলমের একটি অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ৪২ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মোবাইলে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকের আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ বিদ্যালয়টির একের পর এক নেতিবাচক সংবাদে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী।
জেকেএস/