প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৩, ০২:১৩ এএম
পরিকল্পিত উন্নয়নের ছোঁয়াতে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বদলে যাচ্ছে- দেশের জনপ্রিয় ইতিহাস, ঐতিহ্যের তথ্য আদান-প্রদানের বৃহৎ মাধ্যম ডাকঘর। এরই মধ্যে ঝাপসা হতে চলেছে ছোট্ট একটি শব্দ চিঠি। একটা সময় একটা চিঠির জন্য চাতক পাখির মত মানুষের অপেক্ষার শেষ ছিল না। চিঠি বয়ে আনত সুখের বার্তা, কখনো বা দুঃখের। কিন্তু সে সময় এখন অতীত। চিঠির প্রচলন ও ইতিহাস অনেক পুরোনো। চিঠিকে একজনের পক্ষ থেকে অন্যজনের কাছে লিখিত তথ্যধারক বার্তা বললেও ভুল হবে না। চিঠিতেই দু’জন বা দু’পক্ষের মধ্যেই যেন যোগাযোগ বজায় রাখে। চিঠি বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি করে, পেশাদারি সম্পর্ককে খুব উন্নয়ন করে এবং আত্ম প্রকাশের সুযোগ প্রাণবন্ত করে তোলে। আর এই চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যম হচ্ছে ডাকঘর বা পোস্ট অফিস।
চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যম ডাকঘর বা পোস্ট অফিস। নানা ধরনের কথোপকথন হতো এই চিঠির মাধ্যমে। আপনজন, প্রিয়জন কিংবা পরিচিতজনের একটি চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় এক সময় অনেকেরই যাতায়াত ছিল পোষ্ট অফিসে। চিঠি ছাড়াও বিদেশ অথবা দেশে আপনজনের কাছে টাকা পাঠাতে একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম এটি। চিঠিপত্র লেখাকে কেন্দ্র করেই বেড়ে গিয়েছিল চিঠি লেখাকে পেশা রূপে নেয়ার প্রবণতা। ডাকঘরের বারান্দায় লাইনের পর লাইন ধরেই সকল শ্রেণির মানুষের ভিড় লেগেই থাকত।
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে ই-মেইল, অনলাইন আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবাদে এই পোষ্ট অফিসের গুরুত্ব এখন আর আগের মতো নাই বললেই চলে। জীবন বীমা, সঞ্চয়পত্রে টাকা জামানত রাখা কিংবা জরুরী কাগজপত্র পাঠাতে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে পোস্ট অফিস গুরুত্বের সঙ্গে টিকে আছে।
এসব কারণে কাঙ্খিত সেবা পেতে শত শত গ্রাহক প্রতিদিন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের পোষ্ট অফিসগুলোতে আসেন। তবে এই পোষ্ট অফিসগুলো সংস্কারের অভাবে বর্তমানে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে জীবননগর উপজেলার অধিকাংশ পোষ্ট অফিসগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা,আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলায় অবস্থিত বিভিন্ন পোষ্ট অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের চার পাশের সীমানা প্রাচীর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও বা চিঠির বাক্স পড়ে আছে। কোথাও কোথাও ভোটের আইডি কাডে পোস্ট অফিস হিসাবে নাম থাকলেও সেখানে পোস্ট অফিস নেই ,তৈরি হয়েছে চায়ের দোকান। কোথাও গাছের মাথায় অথবা মাটিতে পড়ে আছে পোস্ট বক্স।
অফিসের ভবনগুলোর জীর্ণদশা দেখলে যে কেউ আতকে উঠবে। ছাদের কোনো স্থানে পলেস্তরা নেই বললেই চলে। ভিতর থেকে ছাদের দিকে তাকালে মরিচা ধরা লোহার রডগুলো তাকিয়ে থাকে।
জেলা পোষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি উপজেলা পোস্ট অফিসের অধীনে প্রতিটি ইউনিয়নে খাতা কলমে একটি করে পোস্ট অফিস আছে, কিন্তু কোন কার্যক্রম না থাকার ফলে সে সব জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা পোষ্ট মাস্টার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন ধরে জীবননগর উপজেলাধীন শাখা পোষ্ট অফিসগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শুধু জীবননগর উপজেলায় নয়, প্রতিটি উপজেলায় একই সমস্যা। ভবনগুলো সংস্কারের জন্য পোষ্ট অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানালেও এখন পর্যন্ত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যার জন্য সাধারণ মানুষ পোস্ট অফিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।তবে পোস্ট অফিসগুলো সংষ্কারের ব্যবস্থা করলে মানুষ আবার সেই আগের মত পোস্ট অফিসের দিকে আগ্রহী হতো।