• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের সঙ্গে চলছে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৩, ০৬:৪১ পিএম

মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের সঙ্গে চলছে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। তবে এখন পর্যন্ত রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড খোলা হয়নি। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬১ জন ডেঙ্গু রোগী মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আলাদা ওয়ার্ড না করায় চিকিৎসা সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

সরেজমিনে হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ৬১ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-১, মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-২, তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট- ২ এবং ৩, মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-২ এবং পুরুষ পেইং বেডে মেডিসিন রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় এসব রোগীদের অনেকেই মশারি টানাননি। এছাড়া চারজন ডেঙ্গু রোগী শয্যা না পেয়ে মেঝেতে ফোমের ওপর তোষক পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

দ্বিতীয় তলার পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-১ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মোট ১৬ জন রোগী ভর্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ওই ওয়ার্ডে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগীসহ মোট ৭৭ জন জন ভর্তি রয়েছে। একই তলায় মহিলা মেডিসিন ইউনিট-১ এ ৪৪ টি বেডের বিপরীতে ৭জন ডেঙ্গু রোগীসহ ৯১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এই ওয়ার্ডের রোগীদের এলোমেলোভাবে রাখায় অনেকেই সব সময় মশারি টানাচ্ছে না। ডাক্তার বা নার্সরা এসে তাগাদা দিলে তারা মশারি টানান পরে আবার তা খুলে ফেলেন।

তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-২ এবং ৩ এ মোট ৩৪টি শয্যার বিপরীতে ১২ জন ডেঙ্গু রোগীসহ মোট ৮৭ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। একই তলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-২ এ ২০টি শয্যার বিপরীতে ১১ জন ডেঙ্গু রোগীসহ মোট ৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তৃতীয় তলায় প্রতিদিন ৩২৫ টাকা সিট ভাড়া দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। এখানেও মেডিসিনের রোগী ভর্তি হন। এই ওয়ার্ডের নাম পুরুষ পেইং বেড। সেখানে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগীসহ মোট ২৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। এরপরও সেখানে আরও দুটি বেড ফাঁকা রয়েছে। হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডের চেয়ে এই ওয়ার্ড তুলনামূলক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। 

দ্বিতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-১ এর মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন মোট ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। তাদের একজন ফরিদপুর সদর উপজেলার আকাশ দত্ত (৩৩)। তিনি বলেন, দুদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এখনও মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। উপরে জায়গা পাইনি। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড দূরে থাক, সিটই তো নেই। এতবড় হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা একটা জায়গায় চিকিৎসা দিলে আমরা মেঝেতে না শুয়ে বেডে থেকে আরও ভালোমত চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পাইতাম।

তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড-২ চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী মাদারীপুরের টেকেরহাটের রেদয়ান শেখ (১৯)। তার বাবা তোফাজ্জল শেখ (৪৬) বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে আমার ছেলে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে জ্বর নিয়ে। তবুও জ্বর কমতেছে না।ডাক্তাররা ওষুধ স্যালাইন দিতেছে, কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এখানে গরমে টেকা যায় না তাই গরম বেশি লাগলে মশারি খুলে ফেলি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-১ এর সিনিয়র স্টাফ নার্স এলিজা পারভীন বলেন, আমরা রোগী বা স্বজনদের মশারি টানানোর কথা বললে টানায়, পরে আবার খুলে ফেলে। আমরা বারবার বলছি ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্তি পেতে মশারি টানানো ওষুধের মতো কাজ করে। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে রোগী ও রোগীর স্বজনরা মশারি খুলে ফেলে। ডাক্তার রাউন্ডে গেলে রোগীর স্বজনরা তখন হুড়মুড় করে মশারি টানিয়ে দেয়। ডাক্তার চলে গেলে আবার যা তাই হয়ে যায়। এ বিষয়ে আমাদের কথা অনেক রোগীই পাত্তা দেন না।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক বলেন, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় করোনার চিকিৎসার জন্য বানানো আইসোলেশন ওয়ার্ডে কিছু রোগী সরিয়ে নেওয়া হবে। আমরা ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণে রাখছি। ডেঙ্গু রোগী যদি আরও বেড়ে যায় তখন আমরা ডেঙ্গুর জন্য অবশ্যই আলাদা ওয়ার্ড চালু করব।

ফরিদপুরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৪০ জন। এ নিয়ে গত জানুয়ারি থেকে সোমবার পর্যন্ত ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১৭ জন।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ফরিদপুরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ফরিদপুরে নতুন করে যে ৪০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩, ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন, বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন, নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন, আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ৪ জন এবং মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন রয়েছে।

 

বিএস/

আর্কাইভ