প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৩, ০২:১৩ এএম
জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অতীতে আমরা দেখেছি নির্বাচন এলে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে একটা তামাশা করা হয়। জাতীয় পার্টির কিছু সুবিধাভোগী নেতা আছেন, তাদের কাছ থেকে সাবধান থাকতে হবে।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রংপুর মহানগরীর দর্শনাস্থ পল্লীনিবাসে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি এ সভার আয়োজন করে।
মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, জাতীয় পার্টি জোট-মহাজোট কিংবা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত তা ভেবে চিন্তে নিতে হবে। জনগণ কি চাচ্ছে সেটা অনুধাবণ করতে ভুল করা যাবে না। একটা ভুলেও কিন্তু রাজনৈতিক দলের কবর হয়ে যায়। রাজনীতিতে একটা ভুল সিদ্ধান্ত একটা দলের কবর রচনা করার জন্য যথেষ্ট।
তিনি আরও বলেন, ইতিহাস বিকৃত করা গেলেও সঠিক ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে ধরনের ডায়নামিক চিন্তাভাবনার নেতা ছিলেন, সে ধরনের নেতা আর দেখা যাচ্ছে না। আজকের নেতারা তারা সবাই আছেন তাদের আখের গোছানোর জন্য। কে ক্ষমতায় যাবেন, কে কাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবেন এ নিয়েই ব্যস্ত। একমাত্র হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য চিন্তা করতেন। তিনি প্রথমেই বলে ছিলেন ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।
জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, মানুষ তার কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকে। মানুষের জীবন যখন ক্ষণস্থায়ী, মানুষ বেঁচে থাকে ৬০, ৭০, ৮০ বছর। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আয়ু ছিল ৯৪ বছর। মানুষের মৃত্যু হবে, ওই মানুষটা হাজার বছর বেঁচে থাকবেন তার কর্মের মাঝে। যেমন বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন লাল সবুজের পতাকায়। স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু যেমন অমর হয়ে আছেন, ঠিক একইভাবে আমাদের পল্লীবন্ধু এরশাদও ৬৮ হাজার গ্রামকে ঘিরে বাংলাদেশকে বাঁচানোর স্বপ্ন দেখিয়ে তার কাজে বেঁচে আছেন। তিনি উপজেলা প্রবর্তন, স্বাস্থ্যনীতি, ওষুধ নীতি, বিদ্যুৎ বিল মওকুফ, ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করে গেছেন। তার এই কাজগুলো সাধারণ মানুষের মনিকোঠায় লিপিবদ্ধ আছে, তা মুছে ফেলা যাবে না।
এর আগে বেলা ১১টায় পল্লীনিবাসে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনা প্রধান ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। পরে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, রংপুর মহানগরের সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, জাহেদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আমানত হোসেন আমানত, ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির নেতা ফজলুর রহমান মৃর্ধা ও আমিনুল হক সেলিম মাহাবুব।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক শাফিউল ইসলাম শাফি, অ্যাডভোকেট মোকাম্মেল হক চৌধুরী, জাতীয় যুব সংহতি রংপুর জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম, সদর উপজেলা জাপার আহবায়ক মাসুদ নবী মুন্না, জাতীয় যুব সংহতির মহানগর সভাপতি শাহীন হোসেন জাকির, জাতীয় ছাত্রসমাজের মহানগর সভাপতি ইয়াসির আরাফাত আসিফ, জেলা আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক পার্টির জেলা সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তোফা, মহানগর সভাপতি রাজু আহমেদ ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির রংপুর জেলার সদস্য সচিব মাহাবুবার রহমান বেলাল প্রমুখ।
এ সময় জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু, সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মাসুদার রহমান মিলন, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির রংপুর মহানগর আহ্বায়ক ফারুক মন্ডল, জাতীয় অটো শ্রমিক পার্টির মহানগর সভাপতি তসলিম উদ্দিন প্রধান উজ্জল, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা মিলন, মহিলা পার্টির মহানগরের সদস্য সচিব জেসমিন আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও দেশবাসীর কল্যাণ কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এদিকে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল ৬টায় সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। কালো ব্যাচ ধারণ, কোরআন খতম, নগরীর গুরুত্ব স্থানসমূহে মাইকযোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের জীবনী ও ভাষণ প্রচার করা হয়। বাদ জুমা মহানগর জাতীয় যুব সংহতির দলীয় কার্যালয়ে এবং মহানগর জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির পক্ষ থেকে কেরামতিয়া জামে মসজিদে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও জেলার প্রতিটি পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বিএস/