প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৩, ০৭:০৫ পিএম
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নাড়ির টানে প্রিয়জনদের কাছে ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। রাতে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকলেও সকালে কমে যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপ আবারও বেড়েই চলেছে।
তবে যানবাহনের চাপ বাড়লেও স্বাভাবিক রয়েছে সিরাজগঞ্জের যানজট আতঙ্কে থাকা ৪৫ কিলোমিটার মহাসড়ক। কোথাও কোনো ধীরগতি বা যানজট নেই। সকালের ঢাকাগামী লেনের ধীরগতিও কেটে গেছে। বাস, ট্রাক-পিকআপে যে যেভাবে পারছেন গন্তব্যে ছুটছেন।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহাসড়কের যানজট আতঙ্কে থাকা বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়ক জুড়ে যানবাহনের ব্যাপক চাপ রয়েছে। তবে মহাসড়কের প্রতিটি পয়েন্টেই স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো মেরামত করা হয়েছে। মহাসড়কের যানজট সৃষ্টি করা সংযোগ সড়কগুলো বাঁশ দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যানবাহনগুলোকে যত্রতত্র থেকে যাত্রী তুলতে ও নামাতে দেওয়া হচ্ছে না।
সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট রনি পোদ্দার সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ক্রমান্বয়ে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। তবে কোথাও কোনো যানজট বা ধীরগতি নেই। তিনি বলেন, কোনও গাড়িকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী নামাতে ও তুলতে দেওয়া হচ্ছে না। মহাসড়কে কোনো পরিবহন যেন এলোমেলো ঢুকে যানজটের সৃষ্টি না করতে পারে সেদিকে খুব খেয়াল রাখা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে নীলফামারি প্রিয়জনদের কাছে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করা যুবক আরাফাত আলী। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাতে গাবতলি থেকে উঠেছেন দূরপাল্লার একটি বাসে। তিনি হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় যাত্রাবিরতিতে দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার ফাঁকে সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে এখন পর্যন্ত কোনো যানজট পাইনি। ঠিক এমন ঈদযাত্রাই আমরা আশা করি। তবে গতবারের মতো এবারেও টাঙ্গাইলের মহাসড়কে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
মহাখালী থেকে ছেড়ে আসা নওগাঁ গামী শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের সুপারভাইজার রতন ব্যাপারি সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, সিরাজগঞ্জের মহাসড়কের এবার এখনো কোথাও কোনো যানজট বা ধীরগতি পাইনি। তবে এলেঙ্গা থেকে কিছুটা যানজট ও সেতু পূর্ব পাড়ে টোল আদায়ের কারণে গাড়ি টোল প্লাজার সামনে কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। পুরো ঈদযাত্রাটা এভাবে চললে যাত্রীদের ও আমাদের পরিবহন শ্রমিকদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন হবে।
হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকা থেকে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল কবীর সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, রাত থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ অনেকটা বেড়েছে। আজ স্বাভাবিকের চেয়ে গাড়ি কয়েকগুণ বেশি চলাচল করছে। তবে কোথাও কোনো ধীরগতি বা যানজটের মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। এছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা তৎপর রয়েছি।
সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে যানবাহন অনেকগুণ বেড়েছে। তবে মহাসড়কে চাপ থাকলেও কোনো যানজট বা ধীরগতি নেই। আশা করছি উত্তরবঙ্গের ঘরে ফেরা মানুষের গত ঈদের মতো এবারের ঈদযাত্রাও নির্বিঘ্ন হবে। এছাড়া যানবাহন ও ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে ও সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছি।
এবারের ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত ও মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে জেলা পুলিশ, জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে রোববার (২৫ জুন) ভোর ৬টা থেকে প্রায় ১ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যা মোতায়েন থাকবে টানা ঈদুল আজহার তৃতীয় দিন পর্যন্ত। সিরাজগঞ্জের যানজট আতঙ্কে থাকা ৪৫ কিলোমিটার মহাসড়কের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুত হয়েছে জেলা পুলিশ, জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে থানা পুলিশ।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর হয়ে হাটিকুমরুল গোলচত্বর দিয়ে দেশের উত্তর ও দক্ষিণের ২২ জেলার মানুষ চলাচল করে। এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭-১৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে ঈদের সময় এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫-৪৫ হাজারে। এই সময়ে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে প্রতি বছরই যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। তবে গত ঈদুল ফিতরে তেমন কোনও যানজট সৃষ্টি হয়নি এই মহাসড়কে। এই ভোগান্তি এড়াতে এবার ঈদযাত্রায় নলকা আন্ডারপাস ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে।
বিএস/