প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২১, ০৫:৫০ পিএম
বর্ষাকালের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলে
বাড়ছে নদ-নদীর পানি।
প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। এমন অবস্থায় চলাচলের
একমাত্র ভরসা নৌকা। তাই
বর্ষার আগমনী বার্তায় মানিকগঞ্জে জমে উঠেছে শতবর্ষী
নৌকার হাট।
ঐতিহ্যবাহী
এই হাটের অবস্থান জেলার ঘিওর উপজেলায়। ঘিওর
কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এই হাট
বসে প্রতি বুধবার। এ দিন সকাল
থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ডিঙি নৌকার
বিকিকিনি। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাকডাকে সরগরম থাকে হাট।
সরেজমিনে
গিয়ে দেখা গেছে, সাভার,
টাঙ্গাইলের নাগরপুর এবং সিরাজগঞ্জের বেপারিরা
সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন নৌকা। আর এসব নৌকা
কিনতে এসেছেন জেলার নিম্নাঞ্চল ও আশপাশের অঞ্চলের
মানুষ। সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে নৌকার
দরদাম নিয়ে ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা।
নৌকা
বেপারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা
যায়, নৌকা তৈরিতে ব্যবহার
হয়ে থাকে কড়ই, আম,
চাম্বল, রেইন্ট্রি ও মেহগনি গাছের
কাঠ। আকার ও মানের
ওপর নির্ভর করে দাম। পাঁচ
হাত থেকে শুরু করে
১২ হাত নৌকা সাড়ে
তিন হাজার থেকে শুরু করে
১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিকিকিনি
হয়।
তবে
এবার নৌকার দাম কিছুটা বেশি
বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। কথা হয় নৌকা
কিনতে আসা আব্দুর রহমানের
সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্ষার
সময় নৌকা ছাড়া চলাচল
করা যায় না। নিজের
নৌকা না থাকলে সে
সময় কেউ নৌকা দিতে
চায় না। এ জন্য
নৌকা কিনতে এসেছি। তবে হাটে বেপারিরা
নৌকার দাম বেশি চাচ্ছে।
হেসেন
আলী নামে এক নৌকা
ক্রেতা জানান, তার বাড়ি দৌলতপুর
উপজেলার জিয়নপুর ইউনিয়নের আবুডাঙ্গা এলাকায়। নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা শুরুর আগেই নৌকা কিনতে
এসেছেন তিনি। তবে এবার নৌকার
দাম অনেক বেশি।
বর্ষার
আগেই কেন নৌকা কিনছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে
না কিনলে বর্ষার সময় আরও বেশি
দামে কিনতে হবে। এ জন্য
আগেই দুটি নৌকা কিনেছি।
এদিকে
নৌকা বেপারি শ্যামল চন্দ্র বলেন, হাটে ১২ হাত
প্রতিটি নৌকা ছয় হাজার,
১১ হাত নৌকা চার
হাজার এবং ১০ হাত
নৌকা সাড়ে তিন হাজার
টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্ষাকাল হওয়ায় এই হাটে নৌকার
চাহিদাও থাকে বেশি।
আরেক
বেপারি রঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, এ বছর নৌকা
বানানোর প্রয়োজনীয় কাঠ ও লোহার
দাম কিছুটা বেশি। এ কারণে নৌকার
দাম গতবারের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।
তাছাড়া সব খরচ বাদে
আমাগো তেমন লাভ থাকে
না।
জেলার
চারপাশে ছোট-বড় বেশ
কয়েকটি নদী বয়ে গেছে।
এর মধ্যে হরিরামপুর উপজেলা ঘেঁষে বয়ে গেছে প্রমত্ত
পদ্মা। আর দৌলতপুর ও
শিবালয় উপজেলা ঘেঁষে বয়ে গেছে যমুনা।
অন্যদিকে ঘিওর ও সদর
উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে কালিগঙ্গা
নদী।
এ
ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে
ধলেশ্বরী ও গাজিখালি, ইছামতি
নদী। যার কারণে বর্ষার
শুরুতেই এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল
প্লাবিত হয়ে থাকে। এ
জন্য এসব নিম্নাঞ্চলের মানুষের
মালামাল পরিবহন ও যাতায়াতের একমাত্র
বাহন হয়ে উঠে ডিঙি
নৌকা। আর জমে উঠে
এই নৌকার হাট।
নৌকার
হাটের বিষয়ে ঘিওর উপজেলা পরিষদের
চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের তিন পুরুষের কাছে
থেকে এই ঐতিহ্যবাহী নৌকার
হাটের কথা শুনে আসছি।
মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে এই নৌকার
হাটের সুনাম রয়েছে। বর্ষার আগমনী বার্তায় জেলা ও আশপাশের
লোকজন ডিঙি নৌকা কিনতে
এই হাটে ভিড় জমায়।
টিআর/নির্জন