• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পরকীয়া প্রেমে তছনছ দুটি পরিবার

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩, ০৬:০৭ পিএম

পরকীয়া প্রেমে তছনছ দুটি পরিবার

ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে ডেস্ক

একইদিনে ঘটে চাঞ্চল্যকর দুটি ঘটনা। গতকাল রাজধানী বাড্ডায় খুন হন মা ও ৯ বছরের শিশুকন্যা। অপরদিকে নোয়াখালীর মাইজদীতে দিনে-দুপুরে বাসায় ঢুকে মা ও তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দুটি ঘটনার নেপথ্যে পরকীয়া। বাড্ডায় নিজের পরকীয়ার কাঁটা সরাতে দুধের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে হত্যা করে স্বামী সেলিম। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাদের নয় মাস বয়সী শিশুপুত্র।  ওদিকে নোয়াখালীতে ওমান প্রবাসী পরকীয়া প্রেমিক গৃহবধূকে হত্যার পর তার মেয়েকেও কুপিয়ে হত্যা করে। পরকীয়ার এই বিষে ছত্রখান হয়ে যায় দুটি পরিবার।  পুলিশ দুটি ঘটনারই রহস্য উদঘাটন করেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে গ্রেপ্তারকৃত দুই ঘাতক।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৪ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির মেয়ে মাহমুদা হক বৃষ্টি ও রাজধানী বাড্ডার মো. সেলিমের।

দাম্পত্য জীবনে ৯ বছরের সানজা মারওয়া নামে এক মেয়ে ও সারিম নামে একটি ৯ মাসের ছেলে সন্তান আছে তাদের। বিয়ের পর থেকে তাদের সংসার ভালোই চলছিল কিন্তু প্রায় তিন বছর আগে থেকে সেলিম ও বৃষ্টির মধ্যে বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়।

নিহত বৃষ্টির বাবা মোজাম্মেল জানান, ১৩ই জুন দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সেলিম আমার দ্বিতীয় মেয়ে মিম আক্তারকে ফোন করে করে জানায়, বৃষ্টি ও নাতনী সানজা কোনো সাড়া শব্দ করছে না এবং তাদের শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। খবর পেয়ে আমার ছোট বোন ঝর্ণা আক্তার, আমার বোনজামাই পান্না এবং আমার ভাগিনা বাড্ডার ওই বাসায় গিয়ে বিছানায় বৃষ্টির নিথর দেহ দেখতে পায় এবং পাশের কক্ষে ছোট্ট সানজার নিথর দেহ পড়েছিল। তিনি বলেন, জামাই সেলিম পারিবারিক ঝগড়া বিবাদকে কেন্দ্র করে আমার মেয়ে ও নাতনীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

নিহত বৃষ্টির মামা সোহেল জানান, সেলিম একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। সংসার তাদের ভালোই চলছিল। কিন্তু করোনাকালে তার চাকরি চলে যাওয়া পর থেকেই শুরু পারিবারিক কলহ। বাসা ভাড়ার টাকা তুলে উধাও হয়ে যেত সেলিম। একটা পর্যায়ে স্পষ্ট হয়, একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া ও অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত সেলিম।

তিনি আরও বলেন, পারিবারিক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বিচ্ছেদের জন্য পরিবারের চাপেও রাজি হয়নি বৃষ্টি। বৃষ্টির বক্তব্য ছিল, আর কটা মাস দেখি। যদি বদলায় সেলিম। কিন্তু সেলিম বদলায়নি। সম্পর্কও ছেদ করেনি। বরং সারা জীবনের জন্য আমাদের মেয়ে ও নাতনীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিল সে। তিনি বলেন, সেলিম প্রায়ই বৃষ্টিকে মারধর করত। এর আগেও একবার গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেছে। খারাপ লাগছে, মেয়েটা দুই সন্তানের মুখ চেয়ে সংসারটা টেনে গেছে। খারাপ লাগছে ৯ মাসের নাতিটার জন্য। এমন বয়সে মা ও বোনকে হারাতে হলো শিশু সারিমকে।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ জানান, অন্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় প্রায় সময় স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হতো। সেলিম পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, পরিকল্পনা করেই গত রাতে বাইরে থেকে দুধ কিনে আনে। সেই দুধে ৩০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। স্ত্রীর সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত দুধ খেয়ে ফেলে ৯ বছরের শিশু কন্যা সানজাও। তাতে স্ত্রী বৃষ্টি ও তার শিশু কন্যা সানজা নিস্তেজ হয়ে মারা যায়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে রাজধানীর বনশ্রীর ফরায়েজি হাসপাতাল থেকে মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে তখনই আটক করা হয় সেলিমকে।

সেলিম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, স্ত্রীকেই শুধু হত্যার পরিকল্পনা ছিল সেলিমের। কিন্তু ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত দুধ খেয়ে ফেলে শিশু সানজাও। যে কারণে মারা যায় সেও।

ওদিকে নোয়াখালীর জোড়া মা-মেয়ে খুনের ঘটনা নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, রং নম্বরের ফোনকলে নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফজলে আজিম কচি মিয়ার স্ত্রী নূর নাহার বেগমের (৪০) সঙ্গে পরিচয় হয় ওমান প্রবাসী আলতাফ হোসেনের। এরপর তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। ওমানে ভালো টাকা আয় করতে পারছিলেন না আলতাফ। নুরুন্নাহার তাকে ব্যবসার জন্য টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। ওই আশ্বাসে আলতাফ দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু নুরুন্নাহার তাকে প্রতিশ্রুত অর্থ দেননি এবং সম্ভবত দিতে অস্বীকার করেন। কথা দিয়ে কথা না রাখায় বুধবার সকালে নুরুন্নাহারের বাসায় গিয়ে তার গলায় ছুরি ধরেন আলতাফ। নিজেকে বাঁচাতে পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকা মেয়ে প্রিয়ন্তীর কাছে চলে যান নুরুন্নাহার। সেখানে গিয়ে ছুরিকাঘাতে নুরুন্নাহারকে হত্যা করেন আলতাফ। হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তী (১৬) ঘটনা দেখে ফেলায় তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়।

শহীদুল ইসলাম বলেন, আলতাফ হোসেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের চর মেহের গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে। তাকে বাসা ভাড়া নেওয়ার কৌশল করে ব্যবসার জন্য টাকা নিতে আসতে বলেছিলেন নুরুন্নাহার। টাকা না দেওয়ায় হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা ছুরি এবং ছুরির কভার উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, আলতাফ হোসেনের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত থেকে বাঁচতে প্রিয়ন্তী দৌড়ে নিচে নেমে নিচ তলার ভাড়াটিয়ার বাসার দরজায় ধাক্কা দিলে ভাড়াটিয়া দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়ন্তী ডাইনিং রুমের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে। প্রিয়ন্তীর পিছু পিছু আসামি আলতাফ হোসেন দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ