• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঘুসের টাকা গুনে নেন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা! ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৩, ১২:৫৯ এএম

ঘুসের টাকা গুনে নেন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা! ভিডিও ভাইরাল

ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার ঘুস গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি এখন সবার মোবাইল ফোনে এবং মুখে মুখে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হকের ঘুস বাণিজ্যের ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওটি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ‘টক অব দ্য কোম্পানীগঞ্জে’ পরিণত হয়েছে।

শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক উপজেলা চরহাজারী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আমেরিকা প্রবাসী নুরুল আলম চাষীর কাছ থেকে তার (সামছুল হক) নিজ বাসার কক্ষে বসে ঘুসের টাকা গ্রহণ করে গুনে নিচ্ছেন। স্থানীয় বেলাল আমিন ঘুস বাণিজ্যের মধ্যস্থতা করে দেন বলে স্থানীয়রা জানান।

এছাড়াও চরহাজারী ইউনিয়নে চলমান জরিপ কাজে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে প্রতিটি খতিয়ানের বিপরীতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এবং একজনের জমি ঘুসের বিনিময়ে অন্যের নামে রেকর্ড করার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভুঁইয়া সেটেলমেন্ট অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠক করেন। অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগকারীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাদের কাছ থেকে আদায়কৃত ঘুসের টাকা সেটেলমেন্ট অফিসের সংশ্লিষ্টরা ফেরত দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

চরহাজারী ইউনিয়নে ব্যক্তিমালিকাধীন শত শত একর জমি খাস খতিয়ানভুক্ত করে, তা আবার রাজনৈতিক প্রভাবশালী, ভূমিদস্যু ও কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি নিজ দখলে রেখেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে মধ্যস্থতা করেন স্থানীয় বেলাল আমিন।

এর আগে গত অক্টোবর মাসে একই ইউনিয়নের ভুক্তভোগী যুবলীগ নেতা শাহাদাত উল্যাহ ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদের পৈতৃক জমি অন্যের নামে অবৈধভাবে রেকর্ড করার অভিযোগে নোয়াখালী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগে উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক ও সার্ভেয়ার আবদুল হান্নানকে অভিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে সার্ভেয়ার আবদুল হান্নানকে কোম্পানীগঞ্জ সেটেলমেন্ট অফিস থেকে বদলি করা হলেও উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক বহাল তবিয়তে থেকে ঘুস বাণিজ্য, নানা দুর্নীতি এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চরহাজারী ইউনিয়নে মাঠ জরিপে হয়রানির শিকার সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রফেসর নাফিস বলেন, আমার পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ারা রেকর্ড, সরকারি খাজনাসহ সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও ভূমিদস্যু আমেরিকা প্রবাসী নুরুল আলম অবৈধ মালিকানা দাবি করে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হককে ঘুস দিয়ে তার (আলম চাষী) নামে রেকর্ড করার চেষ্টা করে। এ নিয়ে আমি নোয়াখালী জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দেওয়ার পর কাগজে আমার নামে রেকর্ড করা হলেও কোনো কাগজপত্র না থাকলেও দখল কলামে ভূমিদস্যু আলম চাষীর নাম রেকর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে।

সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা যার-জমি তার’। অথচ সরকারি আইন হচ্ছে- ‘কাগজ যার-জমি তার’। উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাও সামছুল হক গংয়ের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন।

চরহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সোহাগ জানান, আমার এলাকায় মাঠ জরিপে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার পরিষদ ভবনে একটি ক্যাম্প করেছেন। সেখানে জরিপ কাজে প্রতিনিয়ত জনসাধারণ হয়রানির শিকার হয়। ঘুস বাণিজ্যের বিষয়টি সত্য, এ নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। যারা ঘুস দিয়ে খতিয়ান নিতে পারছেন না, এমন অনেক গরিব মানুষকে তদবির করে আমি খতিয়ান নিয়ে দিয়েছি।

অভিযুক্ত এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিও সংশ্লিষ্ট উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (তসদিক কর্মকর্তা) সামছুল হক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির বিরুদ্ধে আমেরিকা প্রবাসী নুর আলম চাষী অপর একটি ভিডিওর মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন। তবে তিনি (সামছুল হক) নুর আলম চাষীর সঙ্গে কিসের টাকা লেনদেন করেছেন তা স্পষ্ট করতে পারেননি।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আবদুল হাই গাজী জানান, টাকা লেনদেনের ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমার কাছেও এসেছে। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ