প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৩, ১১:০৪ পিএম
কক্সবাজারের উপকূলবর্তী বাকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নাজিরারটেক পয়েন্ট সাগরে যে ১০ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে; তাদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন স্বজনরা।
তবে অপর ছয়জনের মধ্যে দুই থেকে তিনজনের মরদেহ একাধিক স্বজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনএ পরীক্ষার পর চূড়ান্তভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
এদিকে কারা, কী কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও কারণ জানতে জেলা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ও সিআইডির বিশেষজ্ঞ দলসহ একাধিক দল কাজ করছে।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গ পরিদর্শন শেষে পুলিশের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি।
প্রাথমিকভাবে স্বজনদের দেয়া তথ্য মতে, পরিচয় শনাক্ত করা ব্যক্তিরা হলেন: মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ারছড়া এলাকার ছনখোলা পাড়ার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে শামশুল আলম ওরফে শামশু মাঝি (৪০), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (১৮), ইউনিয়নটির একই এলাকার সাহাব মিয়ার ছেলে মো. সাইফুল্লাহ (২৩) ও জাফর আলমের ছেলে শওকত ওসমান (১৮) এবং চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের জঙ্গলকাটা এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. তারেক জিয়া (১৮)। এদের মধ্যে শামশুল আলম ওরফে শামশু মাঝি ঘটনায় উদ্ধার ট্রলারের মাঝি বলে দাবি নিহতের স্বজনদের।
এ ছাড়া পরিচয় শনাক্ত না হলেও মর্গে মরদেহ খুঁজতে আসা স্বজনরাসহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, নিহতরা হলেন: মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে নুরুল কবির (২৩), ইউনিয়নটির একই এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ পারভেজ মোশারফ (১৪), মুছা আলীর ছেলে ওসমান গণি (১৭), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের বটতলী এলাকার কবির হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৬) এবং একই ইউনিয়নের জঙ্গলকাটা এলাকার শাহ আলমের ছেলে মো. শাহজাহান (২৯)। এদের মধ্যে ২ থেকে ৩ জনের মরদেহ নিজেদের স্বজনের দাবি করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে রোববার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে কক্সবাজার শহরের বাকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নাজিরারটেক পয়েন্ট সাগরে একটি ডুবন্ত ট্রলারের হিমঘর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অর্ধগলিত ও বিকৃত ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হলেও মরদেহগুলো কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে নেয়ার পর স্বজনদের অনেকে ভিড় করেন। পরে স্বজনরা মর্গে নিহতদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, পরনের পোশাক ও অন্য জিনিসপত্র দেখে মরদেহগুলো শনাক্ত করেন। তবে এদের মধ্যে ২ থেকে ৩ জনের মরদেহ একাধিক স্বজন দাবি করায় পরিচয় শনাক্তে বিড়ম্বনায় পড়ে পুলিশ।
ডিআইজি আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজারের সাগরে ট্রলার থেকে মৃত উদ্ধার ১০ জনের মধ্যে চারজনকে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছেন। মরদেহগুলো অর্ধগলিত ও বিকৃত হয়ে গেছে। বাকিগুলো এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এগুলো শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পরিচয় শনাক্ত না হওয়া মরদেহগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ রাখা হবে। সেই নমুনাগুলো তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মিলিয়ে পরিচয় শনাক্তের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এখন পর্যন্ত কারা, কি কারণে ও কিভাবে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে ডিআইজি বলেন, পুলিশের বিভিন্ন তদন্ত বিভাগ কাজ করছে। ঢাকা থেকে পিআইবি ও সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল কাজ করতেছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে।
সচরাচর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলোতে নাম লিখা থাকলেও মৃতদেহ উদ্ধার করা ট্রলারটিতে কোন নাম লেখা ছিল না।
যেহেতু মরদেহগুলো অর্ধগলিত ও বিকৃত হয়ে গেছে তাই ডিএনএ এর নমুনা পরীক্ষার পর সবার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন ডিআইজি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, মরদেহগুলো ডিকম্পোস্ট হয়ে গেছে। তাই সবারই ডিএনএ এর নমুনা সংগ্রহ রাখা হবে। রেখে সবারই পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। কয়েকজনের আত্মীয়-স্বজনরা মর্গে এসেছেন। তারা পরিচয় চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদেও চিহ্নিত মরদেহের আর যদি কোন দাবিদার না থাকেন এবং সেই ক্ষেত্রে পুলিশ যদি নিশ্চিত হয় তবে তারই আত্মীয়। সেই ক্ষেত্রে তার নিকটাত্মীয়ের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
এডিএস/