প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৩, ০৫:৪৪ পিএম
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ও চরমৈনটঘাট দিয়ে দু’দিন ধরে ঈদযাত্রী পারাপারের ধুম লেগে আছে। বছর ঘুরে নাড়ির টানে ঘরমুখী মানুষগুলো বাড়ি ফিরতে গিয়ে উপজেলা এ নৌরুটের লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাট কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্নভাবে নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ও চরমৈনটঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করার পাশাপাশি দ্বিতীয় তলার ছাদজুড়ে সারি সারি মোটরসাইকেল বোঝাই করে পদ্মা পারাপার, যাত্রীদের সঙ্গের ব্যাগ ও ব্যাগেজের ভাড়া আদায়, ঘাট নৈরাজ্যের শিকার প্রতিবাদী যাত্রীদের অশ্লীল গালমন্দ করে থামিয়ে রাখা, যাত্রীদের পাওনা টাকা ফেরত না দেওয়া ও নারী যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা ও অশ্লীল গালমন্দ করাসহ ঘাট কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতায় ঈদযাত্রীরা চরম নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ও মৈনটঘাট দুটি সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রতিটি ঘাট পয়েন্টে স্পিডবোট ও লঞ্চ স্টেশন পাশাপাশি রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে স্ডিডবোট ঘাট দুটির রাজস্ব আদায় করে চলেছেন সরকারি লোকজন। উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর স্পিডবোট ঘাটটি চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চরমৈনটঘাটটি দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের কর্মচারী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। এতে পদ্মা পারাপারে স্পিডবোট নির্ধারিত ভাড়া ছিল যাত্রীপ্রতি ১৫০ টাকা। কিন্তু বুধবার ঢাকা থেকে আগত ঈদযাত্রীদের কাছ থেকে চরমৈনটঘাটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২০০ টাকা।
এ ব্যাপারে দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে সাত দিনের জন্য ডাক নেওয়া ঘাট ইজারাদার কাজল হোসেন জানান, চরমৈনটঘাটটি এক সপ্তাহের জন্য ডাক নিয়েছেন মূলত আবুল খায়ের। আমি তার পক্ষে ঘাট পরিচালনা করছি। এ নৌরুটে স্পিডবোটের পরিমাণ কম থাকার কারণে গোপালপুর ঘাট থেকে ঝাওয়ালী স্পিডবোট এনে ঈদযাত্রী পারাপার করানো হচ্ছে। তাই ঘাটে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পিডবোট সচল রাখার স্বার্থে যাত্রীপ্রতি অতিরিক্ত ৫০ টাকাসহ ২০০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করছি।
বুধবার সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রতিটি জরাজীর্ণ লঞ্চের কানায় কানায় ঈদযাত্রী বোঝাই করে এবং একই লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ছাদে ২৫-৩০টি করে মোটরসাইকেল সাজিয়ে পারাপার করা হচ্ছে পদ্মা নদী।
লঞ্চে যাত্রীপ্রতি ৭০ টাকা, প্রতি মোটরসাইকেল ২০০ টাকা, যাত্রীর ব্যাগ ব্যাগেজের অতিরিক্ত ভাড়া ৫০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিন্ত একই লঞ্চে ঈদযাত্রী ও মোটরসাইকেল বোঝাই করার ফলে অনেক বেশি ঝুঁকি বেড়ে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে লঞ্চগুলো দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল সকালে লঞ্চে পার হয়ে আসা গোপালপুর ঘাটের একযাত্রী রানা শংকর (৩৫) জানান, তার বাড়ি খুলনা শহরে। তিনি এ নৌরুটে পদ্মাপার হয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু লঞ্চে ওঠার সময় ভাড়া বাবদ মাস্টারকে ৫০০ টাকার নোট দিলে ভাংতির অভাবে টিকিট মাস্টার যাত্রীর পাওনা টাকা দিতে না পেরে টিকিটের গায়ে যাত্রীর পাওনা ২০০ টাকা লিখে দেয়। কিন্তু লঞ্চটি গোপালপুর ঘাটে ভেড়ার আগেই কর্মরত সুপারভাইজার উধাও হওয়ার কারণে যাত্রীদের পাওনা টাকাগুলোও গচ্চা গেছে।
একই প্রতারণার শিকার আরেক যাত্রী উপজেলা সদরে বিএস ডাঙ্গী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ফিরোজা বেগম ওরফে লতা ম্যাডাম। ওই শিক্ষিকাকে লঞ্চ কর্মচারীরা দুর্ব্যবহার ও কুরুচিপূর্ণ গালমন্দ করে সুপারভাইজার একই যাত্রীর দুই দফায় ভাড়া আদায় করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এসব বিষয়ে উপজেলা গোপালপুর ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ফরিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, লঞ্চে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মোটরসাইকেল লোড তো দূরের কথা, এক কেজি মালামালও উঠানো যাবে না বা আইনগত সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। লঞ্চঘাটের নৈরাজ্যের বিষয়টি গভীরভাবে নজরে রাখা হচ্ছে।
বিএস/