প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৩, ১০:৪৪ পিএম
রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে লাগা আগুনে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি দোকান ও গোডাউন পুড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া ছাইয়ের মধ্যে কাপড়ের অবশিষ্টাংশ কুড়িয়ে নিচ্ছেন ছিন্নমূল মানুষ ও পথচারীরা।
মার্কেটের পিছনে বিমর্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাকিব (১৪) নামের একজন জানায়, এখানে আমার ভাইয়ের দোকান ছিল। থ্রি-পিস ও কাপড়ের দোকান। ত্রিশ লাখ টাকার মাল ছিল। আগুনে সবই পুড়ে গেছে। আধপোড়া কাপড় শাড়ি ওরা নিয়ে যাচ্ছে। যদি ওদের কোনো উপকার হয়।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে তিনটায় দেখা গেছে, শত শত ছিন্নমূল মানুষ আধপোড়া কিংবা কিছুটা ভালো আছে, এমন কাপড় কুড়িয়ে নিচ্ছে।
এসব উৎসুক মানুষের ভিড়ে ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীদের কার্যক্রম একদিকে যেমন ব্যহত হচ্ছে, অন্যদিকে কাপড় কুড়াতে আসা লোকজনও তাতে অসুবিধার কারণ হচ্ছেন।
এদিকে বঙ্গবাজারের আগুনে মুহূর্তে সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী সাইদুল। তিনি বলেন, ‘কীভাবে আগুন লাগছে, আমরাও বলতে পারব না। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। গত দুদিনে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ লাখ টাকার মাল উঠেছে আমার দোকানে।’
‘সরকার যদি আমাদের সহায়তা না দেয়, আমরা পথে বসে যাব। এখন সংসার চালানো আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে,’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন তিনি।
ঈদ বাজার সামনে রেখে দোকানে ৯৫ লাখ টাকার মাল তুলেছিলেন বলে দাবি করেন সাইদুল। বঙ্গবাজারের পাঁচটি মার্কেটে সাড়ে পাঁচ হাজার দোকান ও গোডাউন আছে বলে জানান তিনি। দোকান মালিক আছেন তিন থেকে চার হাজার।
পঞ্চাশ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী বলেন, আগুনে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ভোর ৬টায় আগুন লাগার খবর শুনে তিনি বঙ্গবাজার আসেন। কিন্তু নিজের কিছুই রক্ষা করতে পারেননি।
মার্কেটের পেছনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার দেখা হয়। তিনি বলেন, এখানে কোনো গ্যাসের লাইন ছিল কিনা জানি না। এক ছেলে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে থাকেন তিনি। সংসার চালাতে এই দোকানই ছিল তার একমাত্র ভরসা।
আল-আমিন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সম্প্রতি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৪০ লাখ টাকার মাল তুলেছি। একেকটা শাড়ির দাম সাত থেকে আট হাজার করে। সর্বনিম্ন তিন হাজার। কিন্তু সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে ভয়াবহ আগুন লাগে বঙ্গবাজার মার্কেটে। সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
তিনি বলেন, বাতাসের জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট কাজ করে। বঙ্গবাজারের টিনশেড দোতলা মার্কেট পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এরই মধ্যে ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে দেখা দেয় পানির সংকট। আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি আনা হয়। আগুন নেভাতে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর থেকে পানি ছিটানো হয়।