প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৩, ০৬:০১ পিএম
‘তিন মাস ধইরে মাছ-মাংস খাই না। কিনমু ক্যামনে? দাম বেশি। এর আগে কয়দিন ডিম দিয়া ভাত খাইছি। কেমনে জানি আবার সেটারও দাম বাড়ছে। এখন শুধু আলুই ভরসা। প্রতিদিন আলু দিয়ে ভাত খাই। ছেলে-মেয়েরা প্রতিদিন আলু দিয়ে ভাত খাইতে চায় না। সারাদিন যা পাই তা দিয়ে রিকশা ভাড়া, বাড়ি বাড়া, কিস্তির টাকা দিয়ে অল্প কিছু থাকে। সেই টাকা দিয়ে মাছ-মাংস কেনা বড় কঠিন। আয় রোজগার কমলেও সব জিনিসের দাম বাড়ছে। যে কারণে পোলাপানরে ভালো খাওয়াতি পারি না।’
দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন সালাম মুন্সি (৬০) নামে এক রিকশাচালক। তিনি ৩ ছেলে, ২ মেয়ে ও স্ত্রী আলেয়া ভানুকে নিয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার চৌরাস্তা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন।
বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চাল, ডাল, তেল, গ্যাস, আটা, চিনি, মাছ, মাংস, ডিম থেকে শুরু করে শাকসবজি এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, যার দাম বাড়েনি বা বাড়ছে না। বাজারজুড়ে মিলছে শীতের সবজি। কিন্তু এই মৌসুমেও তার দাম আকাশ ছোঁয়া। গত রোববার কাঁচা বাজারে শসা বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ২৫ টাকা, বর্তমানে বাজারে সেই শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। গাজর গত বাজারে ছিল ৩০ টাকা বর্তমানে বাজারে ৫০ টাকা এবং বেগুনে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অপরিবর্তীত রয়েছে কাঁচামরিচ, টমেটো, লেবু ও মিষ্টি কুমড়োর দাম।
রোববার (২৬ মার্চ) সকালে মাদারীপুর শহরের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, লেবু হালি ৫০ টাকা ও মিষ্টিকুমড়ো বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, গরুর মাংস ৭৫০ টাকায়, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়, রুই মাছ ২৫০ টাকা, কাতল ৩০০ টাকা ও ইলিশ মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়ন হোগলপাতিয়া গ্রামের কৃষক গিয়াসউদ্দিন বেপারী বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির কথা কইবেন না, আমরা দুই-আড়াই মাস ধরে মাংসের ধারের কাছে যাইতে সাহস পাই না। মাংসের বাজারে মনে হয় আগুন লাগছে। তেল কিনুম না মাছ কিনুম, চাইল কিনুম না আটা কিনুম কোনো কিছুতে হাত দেওয়া যায় না। আটার দামও ৮০ ট্যাকা কেজি। এ চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে গেছে। বৌ-পোলাপান নিয়ে কীভাবে বাঁচুম জানি না আল্লাহ জানে। সবকিছুর দাম বাড়ে আমাদের দাম বাড়ে না। সরকার বলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু সরকার কি মাঠে এসে দেখেছে যে তরিতরকারির কত দাম। বাপুরে কামলা দেই কিন্তু আমাদের মজুরি কম আর বাড়ে শুধু পণ্যের দাম। চারজনের সংসারে একা খাটি, খুব কষ্টে আছি, দেখার কেউ নেই।’
নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন মেস বা হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরাও। সরকারি মাদারীপুর কলেজের শিক্ষার্থী স্বাধীন রাড়ি বলেন, কলেজের হলে আবাসন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হওয়ায় আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাইরে বিভিন্ন মেসে থাকি। এদিকে খরচ বেড়েছে টিউশনিও নেই। এরপর দ্রবমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে আমরা একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়েছি। আগের তুলনায় এখন প্রতিমাসে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি লাগছে। যা পরিবার থেকে দেয় তাতে চলা বেশ কষ্টকর।
ইমরান হোসেন নামের এক চাকরিজীবী বলেন, তেল গ্যাস থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম শুধু বাড়ছে। যেই টাকা বেতন পাই তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
এদিকে বিক্রেতাদের দাবি প্রশাসন থেকে দ্রব্যমূল্যের যে তালিকা করে দেওয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী তারা বিক্রি করছে।
মাদারীপুর কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন বলেন, রমজানে ব্যবসায়ীরা যাতে জিনিসপত্র বাড়তি দামে বিক্রি করতে না পারে এজন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে। বাড়তি দামে বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, রমজানে কোনো ব্যবসায়ী যাতে অসাধুভাবে দাম বাড়াতে না পারে এজন্য ভোক্তা সংরক্ষণ অদিধপ্তরসহ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। বাজার মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। কোথাও অনিয়ম দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।