প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৩, ০৭:২৫ পিএম
স্বামী সন্তানহীন ৮৫ বছরের বৃদ্ধা আমেনা খাতুন। দেশ স্বাধীনের পর অভাবের তাড়নায় মারা যায় ৩ মাস এবং ৪ বছর বয়সের দুই সন্তান। এরপর মারা যায় স্বামীসহ আরও ২ সন্তান। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার অঝোঁপাড়া গ্রাম পশ্চিম শালকোনায় বসবাস তার। একমাত্র নাতীর উপার্জনে জীবন চলছে আমেনার। থাকেন ছোট্ট একটি টিনের ঘরে। মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীদের হাতে নারীদের ওপর চালানো নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তাই তিনিও নির্যাতনের শিকার হন। নির্মমভাবে পাকবাহিনীদের অত্যাচারের শিকার আমেনা বেগমের স্বীকৃতি মেলেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ৫০ বছর পেরিয়েছে। যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের স্বীকৃতি মিলছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। কিন্তু একাত্তরের পাক বাহিনীদের হাতে নির্মম নির্যাতিত হওয়া বীরাঙ্গনা আমেনা খাতুনের ভাগ্যে মেলেনি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি। দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বেচেঁ আছেন তিনি। নেই কোনো সন্তান এবং জমিজমা। থাকেন টিনের জরাজীর্ণ একটি ঘরে। বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে নাতির পরিবারই তার একমাত্র ভরসা। সাক্ষাৎকারে জানালেন তখনকার সময়ে পাকিস্তানি আর্মির হাতে বিভীষিকাময় নির্যাতনের কথা। ১৯৭১ সালে দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলার চেষ্টা করছিলেন ৪ সন্তানের জননী আমেনা খাতুন। বর্ষাকালের শ্রাবণ মাসের কোনো একদিন সকালে পুকুর ঘাটে হাড়ি পাতিল মাঝতে গিয়েছিলেন। ঘরে রেখে আসছিলেন ১৬ দিন বয়সের শিশু। এমন সময় তিনি দেখেন পাকিস্তানি আর্মি বাড়িতে প্রবেশ করছে। তখন তিনি হাড়ি পাতিল রেখে দৌড়ে অন্য একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেই বাড়ির ঘরের কোণে অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে আশ্রিত আমেনা খাতুনকে ধরে নিয়ে এসে বাড়ির উঠানে প্রকাশ্যে চালানো হয় ধর্ষণের মতো অমানষিক নির্যাতন। তারপর তাকে সেখানেই রেখে চলে যায় পাকবাহিনীরা। সেখান থেকে ফিরে বাড়ি এসে সন্তানকে নিয়ে পাড়ি জমালেন বাবার বাড়িতে। কিছুদিন পর মারা যায় এই সন্তান। দেশ স্বাধীনের পর সম্ভ্রম হারানো এই নারী অন্যের বাড়িতে কাজ করে উপার্জিত টাকা খরচ করে বীরাঙ্গনা স্বীকৃতির দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দফতর ঘুরে আজও সেই স্বীকৃতি পাননি। ২০২০ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বীরাঙ্গনা খেতাব পেতে আবেদন করেন আমেনা খাতুন। তদবির করার মতো কেউ না থাকায় সেই আবেদন আর আলোর মুখ দেখেনি। উপজেলা প্রশাসনের কাছেও আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন ভূইয়া বলেন, বিরঙ্গনা আমেনা খাতুন ১৯৭১ সালের পাক বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। সরকার বিরঙ্গনাদের মুক্তিযুদ্ধার ঘোষণা দিলেও কেন আজও স্বীকৃতি পায়নি আমেনা খাতুন তা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই, খোঁজ নিয়ে দেখবো।
এএল/