• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

স্বামীকে না পেয়ে স্ত্রী ও ২ শিশুকে থানায় আটকে মামলা দিলেন ওসি!

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩, ০৭:০৩ পিএম

স্বামীকে না পেয়ে স্ত্রী ও ২ শিশুকে থানায় আটকে মামলা দিলেন ওসি!

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও দুই শিশুকে থানায় আটকিয়ে রেখে মামলার অভিযোগ উঠেছে ঈদগাঁও থানার ওসির বিরুদ্ধে।

গত সোমবার ২০ মার্চ সকালে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে ঈদগাঁও উপজেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার পূর্ব ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ফরাজীপাড়া এলাকায় প্রতিবেশী মৃত নজীর আহমেদের ছেলে শাহজাহান ও মৃত আবু শামার ছেলে হারুন অর রশীদের মধ্যে নলকূপের পানি চলাচল নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় শাহাজাহান হারুন অর রশীদকে নখ কাঁটার যন্ত্র দিয়ে আঘাত করলে শাহজাহান আহত হন। 

ঘটনার পর পরই কোনো অভিযোগ ছাড়াই ঈদগাঁও থানার এসআই গিয়াস উদ্দিন ফোর্স নিয়ে বিকালে শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় শাহজাহানকে না পেয়ে তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন, দুগ্ধজাত এক শিশু এবং দুই বছরের এক শিশুকে থানায় নিয়ে গিয়ে আটকিয়ে রাখেন। থানার হাজতে মা ও দুই শিশুকে আটকিয়ে রাখার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে তোলপাড় শুরু হয়। একপর্যায়ে ওসি আইনগতভাবে বাঁচার জন্য ভিকটিম হারুন অর রশীদের স্বজনদের থানায় ডেকে নিয়ে নাটকীয় কায়দায় মামলা রেকর্ড করে আদালতে প্রেরণ করেন বলেও জানান স্থানীয়রা।

স্ত্রীসহ বাচ্চাদের ধরে এনে আদালতে সোপর্দ করার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে মানবাধিকারকর্মীরা। তারা বলেন, অভিযুক্তকে না পেয়ে স্ত্রী ও দুই শিশুকে থানায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটকিয়ে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ছাড়া মামলার পর আসামিকে গ্রেফতার করার নিয়ম থাকলেও কীভাবে আটকিয়ে রেখে মামলা করা হয় প্রশ্ন মানবাধিকারকর্মীদের।

ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, ঘটনাটি মীমাংসাযোগ্য। পুলিশ কোনো অভিযোগ ছাড়াই অতিরঞ্জিত করে নিরীহ স্ত্রী ও নিষ্পাপ দুই শিশুকে বেআইনিভাবে থানায় নিয়ে যায়। এটি অমানবিক নিষ্ঠুরতা। স্বামী বা পিতার দোষে নিরীহ বাচ্চাদের ধরে এনে মামলা করাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে এসআই গিয়াস উদ্দিন জানান, মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শাহজাহানের স্ত্রীকে আটক করে আনা হয়েছে। পরে ভিকটিম হারুন অর রশীদের পরিবার মামলা করলে সে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে ঈদগাঁও থানার ওসি মো. গোলাম কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে জানতে চাইলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, ওসি আমাকে জানিয়েছেন মারামারির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমের আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখতে পায়। এ ঘটনা কেন্দ্র করে ভিকটিমের আত্মীয়স্বজনরা অভিযুক্ত হারুন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। এ সময় জনরোষ থেকে বাঁচাতে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রী ও বাচ্চাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঈদগাঁও থানার ওসি। এর পর ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত হারুন-অর রশিদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এজাহার জমা দিলে পুলিশের পক্ষ থেকে ভিকটিমকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা না করার জন্য বোঝানো হয়। এর পরও ভিকটিম পুলিশের কথা শোনেননি। তাই বাধ্য হয়ে মামলা নিয়ে ফরিদা ইয়াসমিনকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি পুলিশ সুপারের।

 

/এএল

আর্কাইভ