প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩, ০২:৪২ এএম
পাঁচ মাসের কন্যা আনাহিতা বুঝতে পারল না মা সুইটি আলম সুরভী (২২) সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রোববার (১৯ মার্চ) বিকেলে সুরভীর লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে গোপালগঞ্জ শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
বাবা সুরভীকে নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকায় কিন্তু ফিরলেন মেয়ের লাশ নিয়ে। তাদের ছোট মেয়ে আত্মহত্যা করেছে ৪ বছর আগে, আর আজ বড় মেয়ের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু; শোকে নির্বাক সুরভীর মা বিউটি খানম।
দেড় বছর আগে রংপুরের রেজাউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় সুরভীর। রেজাউর ঢাকায় বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পড়ালেখা করার কারণে দুই মাস বয়স থেকে আনাহিতাকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকার মিরপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকেন সুরভী। ঢাকার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় নামে বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি।
সুরভীকে নিয়ে আজ রোববার (১৯ মার্চ) ভোর ৬টায় ইমাদ পরিবহনের গাড়িতে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বাবা মাসুদ আলম। দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে মাসুদ বেঁচে গেলেন। চোখের সামনে মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক বাবা।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের বাস মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিচে পড়ে যায়। দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন।
এ দিকে মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনে গোপালগঞ্জের বাড়িতে চলছে মাতম। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর কথা যেন মেনে নিতে পারছে না নিহত সুইটির মা। মেয়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়লে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বাবা মাসুদ আলম আহতাবস্থায় গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধী রয়েছে। মাসুদ আলমের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার মেরি গোপিনাথপুর গ্রামে হলেও দীর্ঘ বছর আগে থেকে শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে থাকছেন।
নিহত সুইটির মামা নুরু মিয়া বলেন, ‘আমার দুলাভাই এসেনশিয়াল ড্রাগসে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন। সকালে মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। ১০টার দিকে আমাদের কাছে ফোন আসে সুরভী নেই।’
এ দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জনের মধ্যে গোপালগঞ্জের নয় জন রয়েছে। তারা হলেন, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফসানা মিমি, গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক অনাদী রঞ্জন মজুমদার (৫৩), গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর গ্রামের তৌয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া বাহার (৪২), সদরে বনগ্রামের সামচুল শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৩০), সদরের ছুটকা গ্রামের নওশের আলী শেখের ছেলে সজিব শেখ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কাঞ্চন শেখের ছেলে মো: কবির শেখ, মুকুসদপুর উপজেলার আমজাদ আলীর খানের ছেলে মাসুদ খা (৩২), বাসের সুপার ভাইজার সদর উপজেলার মানিকদাহ গ্রামের মিজানুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস।