প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৩, ১২:২৬ এএম
নওগাঁয় টাকা লেনদেন ও পরকীয়া সম্পর্কের জেরে বুলবুল আহমেদ নামে এক যুবককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ হাবিব নামে একজনকে আটক করেছে।
এ ঘটনা ঘটে গত সোমবার (১৩ মার্চ) রাত ৮টার দিকে নওগাঁ শহরের চকমুক্তার মন্ডলপাড়া (চারা বাগান) মহল্লায়। নীলফামারী জেলার উত্তর দুরাকুটি গ্রামের বাহান উদ্দিনের ছেলে নিহত বুলবুল আহমেদ। এ ঘটনার পর থেকে হাবিবের স্ত্রী মোসলেমা পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়, নওগাঁ শহরের চকমুক্তার মন্ডলপাড়া (চারা বাগান) মহল্লায় গত এক বছর কাজী আব্দুস সামাদের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিল হাবিব এবং তার স্ত্রী মোসলেমা। তাদের প্রায় ২০ বছরের দাম্পত্য জীবনে দুই সন্তান রয়েছে। হাবিবের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার উত্তর দুরাকুটি গ্রামে। তবে তার স্ত্রী মোসলেমার বাবার বাড়ি নওগাঁ শহরের মাস্টারপাড়া মহল্লায়।
নিহত বুলবুল আহমেদ ও হাবিব সম্পর্কে চাচাতো ভাই। সোমবার রাত ৮টার দিকে কাজী আব্দুস সামাদের বাসার পেছনে হাবিব ও মোসলেমার সঙ্গে বুলবুল আহমেদের বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছিল। এক পর্যায়ে গায়ে আগুন নিয়ে চিৎকার দিয়ে জীবন বাঁচাতে দৌড়ে পাশের ডোবায় কচুরিপানার মধ্যে ঝাঁপ দেন বুলবুল। তবে সেখানে পানি ছিল না। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে বস্তা ও পাশে পড়ে থাকা ইটের গুঁড়ি (রাবিশ) দিয়ে আগুন নেভান। তাকে উদ্ধার করে রাত ৯টার দিকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে ঢাকায় নেয়ার পথে বুলবুলের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকে মোসলেমা পলাতক রয়েছেন।
বুলবুলকে এর আগে শহরের বাসিন্দারা কখনো দেখেননি। সন্ধ্যায় ঐ মহল্লার গলিতে প্রেমের ঘটনা কাগজে লেখা অবস্থায় মোসলেমা ও বুলবুলের ছবিসহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে বোঝা যায় তাদের দুইজনের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ঐ কাগজে মোসলেমাকে বিভিন্ন সময় বুলবুল টাকা দিয়েছে এবং তাকে নিয়ে সংসার করতে চাই- এসব লেখা ছিল।
হাসপাতালে জরুরি বিভাগে গুরুত্বর আহত অবস্থায় বুলবুলকে বলতে শুনা যায় ‘মোসলেমা ও হাবিব তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।’
কাজী আব্দুস সামাদ স্ত্রী শাহারা বেগম জানান, গত এক বছর ধরে মোসলেমা ও হাবিব তাদের বাসায় ভাড়া থাকেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে গায়ে আগুন নিয়ে দৌড়ে দোকানের সামনে দিয়ে একজন কচুরিপানার মধ্যে ঝাঁপ দেন। পরে কয়েকজন আগুন নিভিয়ে আহত যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, একটি কাগজে ভালোবাসার গল্প লেখা ছিল। এছাড়া নিকাহনামার ফটোকপি কাগজের সঙ্গে মোসলেমা ও বুলবুলের ছবিও লাগানো ছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে স্বামী সংসার থাকার পরও ঐ দুইজনের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল।
ঘটনা জানার পর হাসপাতালে আহত যুবককে কয়েকজন দেখতে যান। এ সময় ডাক্তাররা তার গায়ে মলম ও ব্যান্ডে লাগিয়ে দিচ্ছিলেন। তার কাছে জানতেই চাইলে আহত যুবক বলেন, মোসলেমা ও বুলবুল তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।
নওগাঁ সদর থানার ওসি ফয়সাল বিন আহসান জানান, কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনার সত্যতা আছে। হাবিব-মোসলেমা ও বুলবুলের সঙ্গে টাকার লেনদেনের একটি বিষয় ছিল। তাকে টাকা দিবে মর্মে বাড়িতে ডেকে নেয়া হতে পারে। পরে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে বুলবুলের গায়ে কেরোসিন দিয়ে তারা আগুন লাগিয়ে দেন। তিনি জীবন বাঁচাতে দৌড় দেন।
ওসি আরো জানান, স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পরে ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়ও থাকতে পারে। নিহত বুলবুল ও হাবিব সম্পর্কে চাচাতো ভাই। ঘটনার পর হাবিবকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা হবে।