• ঢাকা শনিবার
    ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এই নারী প্রতিদিন ১২ ঘন্টা রেল গেটে দায়িত্ব পালন করে, কেন জানেন?

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৩, ০১:২১ এএম

এই নারী প্রতিদিন ১২ ঘন্টা রেল গেটে দায়িত্ব পালন করে, কেন জানেন?

ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে ডেস্ক

প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত এভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন নারী গেটম্যান ফাতেমা খাতুন সুমি। মানুষের নিরাপত্তা দিতে ভালোবাসার টানেই ৮ ঘন্টার পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেন ১২ ঘন্টা। চিত্রটি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন আখ সেন্টার পাড়া ‘টি-শার্ট’ গেটের (এই গেটটিকে রেলের টি-শার্ট গেট বলে)।

জানা যায়, ফাতেমা খাতুন সুমি সাফদারপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী মেয়ে। একই এলাকায় তার বিয়ে হয়েছে। স্বামী মনিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ মিস্ত্রির কাজ করেন। ফাতেমার বাবা রেলওয়ের কর্মচারি ছিলেন। সামান্য বেতনে চাকুরি করতেন। তারা ৫ ভাই আর দুই বোন। বড় পরিবার হওয়ায় ছোট বেলায় ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারেননি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবা তার বিয়ে দিয়ে দেন।

স্বামীর বাড়িতে খুব কষ্ট করে চলতে হচ্ছিল। ইতিমধ্যে রেজওয়ান রিয়াদ (১৬) ও আসিকুর রহমান (১৪) নামে তাদের দুই সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে এইচ.এস.সি পড়ছে। ছোট ছেলে এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। তিনিও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করে বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ালেখা করছেন।

ফাতেমা খাতুন সুমি জানান, এই অবস্থায় বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল থেকে বেশ কিছু গেটম্যান নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে আমি নিজের ইচ্ছাতেই আবেদন করি এবং আমার চাকুরিটাও হয়ে যায়। ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল রেলওয়ের একজন গেটম্যান হিসেবে যোগদান করি।

তিনি আরও জানান, যোগদান করেই কোটচাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশনে কাজ শুরু করি। এরপর ডেপুটেশনে সাফদারপুর রেল স্টেশনের পাশ্ববর্তী ‘টি-শার্ট’ গেটের দায়িত্ব নিই।

ফাতেমা খাতুন সুমি বলেন, ‍‍`স্থানীয় বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনগণের চলাচল বেশি হওয়ায় গেট সামলাতে কিছু বেগ পেতে হয়, তবে দায়িত্ব পালন করতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। ট্রেন আসার সিগন্যাল পেলেই আমি রাস্তার দু-পাশে মানুষ ও যানবাহনকে দাঁড় করিয়ে দিই। এরপর ট্রেন চলে গেলে আবার সাফদারপুর স্টেশনে ফিরে যাই। পুনরায় যখন ট্রেন আসার সিগন্যাল পাই, তখন ছুটে যাই গেটে। ভালোই লাগে চাকুরিটা করতে। এখানেই আমার বাবার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি, পাশেই স্টেশন। আমার গেটে দায়িত্ব পালনের সময় ৮ ঘন্টা হলেও এখানকার মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কাজের প্রতি ভালোবাসার টানে আমি ১২ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করি। পরিবার থেকেও আমি সহযোগিতা পাই। গেটের দায়িত্ব পালন করে সংসার সামলাচ্ছি, সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছি। সব মিলিয়ে খুবই ভালো আছি।‍‍`

এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালক জানান, মেয়েটি খুবই ভালো। কষ্ট করে এই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকেন। এটা তার চাকুরি হলেও নারী হয়ে যে কষ্ট করে চাকুরি করেন, তা দেখে পথচারীরা সহানুভূতি দেখিয়ে থাকেন। তাছাড়া ফাতেমা যেভাবে সবাইকে অনুরোধ করেন, তার কথা না রেখে কেউ পারেন না। তাই ফাতেমার পতাকা পেরিয়ে কেউ যেতে চান না। তবে এই স্থানে একটি বসার জায়গা আর ব্যারিকেড প্রয়োজন। সেই সঙ্গে একজনের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কষ্টকর, তাই আরেকজনের পোস্টিং জরুরি।

কোটচাঁদপুর রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার গোলাম রসুল বলেন, ‍‍`মেয়েটি খুবই ভালো। যথেষ্ট সতর্কতার সাথে গেটে দায়িত্ব পালন করেন। আমাদের ভালোই লাগে তাকে দেখে যে, একজন নারী হয়েও সংসার এবং কর্মক্ষেত্র দু-টোই ভালোভাবে সামলাচ্ছেন।‍‍`

তিনি বলেন, ‍‍`ফাতেমার স্বামী ও বাবার বাড়ি এবং সাফদারপুর স্টেশন গেটের পাশেই। আর এই গেটে কোন ব্যারিকেড বা গেটম্যান নেই। ফলে তাকে কোটচাঁদপুর স্টেশন থেকে ডেপুটেশনে এই ‍‍`টি-শার্ট‍‍` গেটের দায়িত্ব দেওয়া হয়।‍‍`

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ