• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

প্রবাসী স্বামী ‘খরচ না দেওয়ায়’ শিশুকে ভিক্ষুকের কোলে রেখে চলে যান মা

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩, ১২:২৭ এএম

প্রবাসী স্বামী ‘খরচ না দেওয়ায়’ শিশুকে ভিক্ষুকের কোলে রেখে চলে যান মা

ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার দক্ষিণ মজুপুরে গত বুধবার (১ মার্চ) “ওয়াশরুমে যাওয়ার” কথা বলে এক বৃদ্ধ ভিক্ষুকের কোলে তিন মাস বয়সী নিজের শিশুপুত্রকে রেখে যান এক নারী। পরে তিনি আর ফিরে আসেননি। বিষয়টি পুলিশ জানার পর আলোচনা তৈরি হয়।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিশুটির মা সহ পরিবারের লোকজন সদর থানায় শিশু পুত্রটিকে ফিরিয়ে নিতে আসেন।

শিশুটির মা জানান, প্রবাসী স্বামী সংসারের খরচ না দেওয়ায় “জেদ করে” ভিক্ষুকের কোলে শিশুকে রেখে গেছেন তিনি। পরে অনুশোচনা হয় তার। এ জন্য শিশুটিকে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন।

তবে এখনই তিনি সন্তানকে ফেরত পাচ্ছেন না। পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের মাধ্যমে ওই শিশুকে তার প্রকৃত অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

জেলার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ জানান, শিশুটির মায়ের আরও তিনটি মেয়ে আছে। তার সৌদি প্রবাসী স্বামীর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়। ওই নারী জেলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সন্তানদের নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিন মেয়েকে সেখানকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন।

ওই নারী জানিয়েছেন, চার সন্তান নিয়ে তিনি জেলা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। প্রতিমাসে ১১ হাজার টাকা কিস্তি, সন্তানদের খরচ, সংসারের খরচ লাগে। সব মিলিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়। মুদি দোকানে অনেক দেনা হয়েছে। কিন্তু তাদের বাবা কোনো খরচ দেন না। তাই তার ওপর জেদ করে এ কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, “শিশু সন্তানকে ভিক্ষুকের কোলে রেখে অন্য সন্তনদের নিয়ে বাপের বাড়ি ভবানীগঞ্জে চলে গিয়েছিলাম। ছেলেকে না নিয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন আমাকে বকাঝকা শুরু করে। পরে বুঝতে পেরেছি কাজটি আমি ঠিক করিনি। বুকের ধনকে রেখে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। পরদিন সকাল থেকে তাকে খুঁজেছি। কোথাও পাইনি। পরে বিকেলের দিকে পরিচিত একজনের ফেসবুকের মাধ্যমে শিশুটির বিষয়ে জানতে পারি। তার মাধ্যমে থানায় আসি।”  

শিশুটির দাদা জানান, ১০ থেকে ১২ বছর আগে তার ছেলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ছয় মাস তারা বাড়িতে ছিলেন। তার ছেলে সৌদি আরবে থাকেন। আর তার পুত্রবধূ নাতি-নাতনিদের নিয়ে জেলা শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন।

তার ছেলে সংসারের খরচ পাঠায় দাবি করে তিনি বলেন, “তার ছেলে ছয় মাস আগে দেশ থেকে সৌদি আরবে ফিরে যান। তার পুত্রবধূ ‘মানসিক সমস্যার কারণে‍‍` নাতিকে ভিক্ষুকের কাছে রেখে চলে গেছেন। এটা কোনো ‘স্বাভাবিক মানুষের কাজ না‍‍`।”

বুধবার বিকেলে পুলিশ শিশুটিকে ভিক্ষুকের কোল থেকে উদ্ধারের পর স্থানীয় কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের তত্বাবধানে দেয়। কাউন্সিলর তার আত্মীয় এক নিঃসন্তান দম্পতির ঘরে লালন-পালনের জন্য রাখেন শিশুটিকে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটিকে আদালতে সোপর্দ করে তার দায়দায়িত্ব সমাজসেবা কার্যালয়কে দেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। পরে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই নিঃসন্তান দম্পতি আদালতের কাছে শিশুটিকে লালন-পালনের আবেদন জানালে শর্ত সাপেক্ষে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।  

পুলিশ সুপার বলেন, “আদালত থেকে ওই দম্পতিকে লালন-পালনের দায়িত্ব দিলেও শর্ত ছিল শিশুটির পরিবারকে পাওয়া গেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এখন তার মা এবং পরিবারের খোঁজ মিলেছে। আমরা আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেব। আইনি পক্রিয়ার ভিত্তিতে শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবে তার মা। তবে সে সময় পর্যন্ত শিশুটি ওই নিঃসন্তান দম্পতির কাছে থাকবে।”
 

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ