• ঢাকা সোমবার
    ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রাণের বইমেলায় বাঁজছে বিদায়ের সুর

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩, ০৪:৪৪ পিএম

প্রাণের বইমেলায় বাঁজছে বিদায়ের সুর

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

শেষ মূহুর্তে অনেক ভালো আর মন্দ মিলেমিশে যায়। অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। গতকাল সোমবারের মেলা ছিল আয়োজন, উদ্‌যাপন আর অনেক আক্ষেপ নিয়েও জম জমাট মেলা। মানুষ এসেছে, বই কিনেছে আবার বই না কিনে ঘুরে বেড়ানোর মানুষও  কম ছিল না।

মেলা শেষ হওয়ার এক দিন আগে গতকাল আয়োজনও ছিল অনেক। লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে ‘হুমায়ুন আজাদ দিবসের ডাক: পাইরেসিমুক্ত বইমেলা চাই’ প্রতিপাদ্যে স্মরণ করা হলো তাঁকে। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসে তথ্যকেন্দ্রের সামনে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা।

গতকাল বাংলা একাডেমি চত্বরেও পাঠক ছিলেন। তবে ভিড় হওয়া না–হওয়া মেলার মূল চেতনার সঙ্গে যে খুব বেশি সম্পৃক্ত নয়, সে কথা উঠে এল নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের কথায়। তিনি বললেন, ‘আশি, নব্বইয়ের দশকে সমাজে একটা বিরাট গণতন্ত্রের সংগ্রাম ছিল। বইমেলার সঙ্গে তা মিলেমিশে যেত। মেলা, আন্দোলন, লেখাপড়া, চিন্তা সবকিছুতেই নিস্তরঙ্গতার সময় যাচ্ছে এখন। তবে শেষ পর্যন্ত বই পড়া ছাড়া সমাজে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসবে না। তাই বই পড়তেই হবে। তরুণেরা কেউ কেউ বই কিনছেন, যা দেখতে ভালো লাগে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গোল অংশ থেকে স্বাধীনতাস্তম্ভের দিকে লেকপাড়ের পাশে যাওয়ার সময় জার্নিম্যান বুকসের প্যাভিলিয়ন। গতকাল এখানে এল প্রয়াত কবি এবং সাহিত্য সম্পাদক আবুল হাসনাতের বই বিদ্যাসাগর, জীবনানন্দ, নেরুদা ও অন্যান্য। আবুল হাসনাতের লেখা অগ্রন্থিত প্রবন্ধ সংকলন নিয়ে এ বই। কামাল চৌধুরী, আহমাদ মাযহার, ইরাজ আহমেদ, নাসিমুন আরা হক, আসিফ মুনীর, তারিক সুজাতসহ আরও অনেকে উপস্থিত হলেন এই বইটিকে কেন্দ্র করে। উঠে এল আবুল হাসনাতকে নিয়ে তাঁদের স্মৃতিকথা।

গতকাল মেলা শেষ হওয়ার এক দিন আগে নতুন বই এসেছে ১৫৮টি।

গত কয়েক দিনে মেলায় এসেছে আরও অনেক নতুন বই। আগামী প্রকাশনীতে এসেছে সাইমন জাকারিয়ার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন-তথ্য নতুন পর্যবেক্ষণ। কথাপ্রকাশে এসেছে রামেন্দু মজুমদারের থিয়েটার পত্রিকা সম্পাদকীয় সংকলন, কবি এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার বই সাহিত্যের পৃথিবী, মোকাররম হোসেনের আগস্ট আবছায়ার মায়াবী বৃক্ষেরা।

অবসর এনেছে ইয়াসমিন আরা সাথীর লেখা কবিগান সমাজপ্রেক্ষিত ও রূপবৈচিত্র্য। ঐতিহ্যতে আছে রফিক আজাদ রচনাবলী, জে টি রেঙ্কিনের ঢাকা ডায়েরি, হোসাইন মোহাম্মদ জাকির ঘাটের কথা: গোয়ালন্দ। নাগরী এনেছে মোহাম্মদ রফিকের দিনলিপি পথিক পরাণ।

প্রথমা প্রকাশনে আছে ১৯৭১: দ্য শিলিগুড়ি কনফারেন্স অথবা প্রয়াত সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের লেখা প্রবন্ধের বই নির্বাচননামার মতো ইতিহাসভিত্তিক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক (প্রশাসন) কে এম মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বললেন, ‘প্রথম সদস্যসচিব হিসেবে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি মেলাটি সুন্দর করার। কিছু কিছু অসংগতি ছিল। এবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে আশা করি আরও ভালো হবে সামনের মেলা।’

মেলা শেষে বের হয়ে আসার সময় দেখা গেল রোজ ফুলের টায়রা বিক্রি করা ছোট ছেলেটি নিজেই একটা মাথায় দিয়ে ঘুরছে। এই ছোট ঘটনাগুলো মেলার অনুষঙ্গ। এই ছেলেটির সঙ্গে আর হয়তো দেখা হবে না আজকের পর। ওরও হয়তো বদলে যেতে পারে পেশা।

আর্কাইভ