• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে জঙ্গিরা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩, ১১:১৮ পিএম

ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে জঙ্গিরা

ইমরান আলী, ঢাকা

চলতি বছর নির্বাচনের বছর। দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানাদিক থেকে চলছে চক্রান্ত। পিছিয়েই নেই জঙ্গিরাও। সংঘঠিত হয়ে তারাও নাশকতা চালানোর নানা পরিকল্পনা করছে। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা নতুন জঙ্গি সংগঠন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া পাহাড়ে কেএনফের সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণও নিচ্ছে।  যে কয়েকজন ঘর ছেড়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এখনো ধরা পড়েনি। এমন অবস্থায় জঙ্গিরা ভয়ঙ্কর হয়ে নাশকতা ঘটিয়ে অস্থিতিশিল পরিবেশ তৈরী করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। 

 
তবে নির্বাচনের আগে জঙ্গি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্তমান সময়ে নানাকাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যস্ত থাকে। ব্যস্ততার এ সুযোগ নিতে চাইলেও এবারে তা হবে না। পাশাপাশি জঙ্গিদের কঠোর ভাবে মনিটরিং হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটনের পুলিশের জঙ্গি দমন সংক্রান্ত বিশেষায়িত ইউনিট সিটিটিসি, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট এবং র‌্যাবের বিশেষ টিম জঙ্গি কার্যক্রমের ওপর বিশেষ নজরদারী চালাচ্ছে। এ কারণে বিশেষ কোন সুবিধা করতে পারবেনা বলে মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। 


জানা যায়, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াসহ জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হিযবুত তাহরীরের বিপুল সংখ্যক জঙ্গি ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছে শারক্বীয়ার আমিরও। এমনকি শারক্বীয়ায় যোগ দিতে পাহাড়ে প্রশিক্ষণে যাওয়া ৩৯ যুবকের অবস্থান নির্নয় করা হয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় চেষ্টা চলছে। এমন অবস্থায় কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সময়ে জঙ্গিরা কোন নাশকতা চালানোর চেষ্টা করলেও তা রুখে দেয়া হবে। 
সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচনে জঙ্গিদের প্রভাব থাকবেনা। আমরা এ সময়টাতে কঠোর নজরদারী করছি। তাদের কোন পরিকল্পনাই সফল হবেনা। 


তিনি বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনের যারা পাহাড়ে গিয়েছিল প্রশিক্ষনের জন্য তাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। আমির গ্রেফতারের পর আমরা কিছু তথ্যও পেয়েছি। সেটি নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের অবস্থান শনাক্তের পর্যায়ে। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। 


জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি শারিক্বীয়ার নায়েবে আমির মহিবুল্লাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। ভোলার শায়েখ নামে পরিচিত মহিবুল্লাহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে শারিক্বীয়া নামের নতুন এ সংগঠনের নামকরণ থেকে শুরু করে পাহাড়ে যুবকদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার সংস্পর্শে আসা অনেকেই এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। পাহাড়ে যে তরুনরা প্রশিক্ষনে গেছে তাদের সে তামিল দিত। সংগঠনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন তিনি। 


গত ৭ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচিতে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন কেএনএফের ও জঙ্গিদের সঙ্গে র‌্যাবের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা ১৭ জঙ্গি ও ৩ জন কেএনফের সদস্যকে গ্রেফতার করে । এ সময় বিপুল পরিমান অস্ত্র ও প্রশিক্ষনের নানা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। উদ্ধার হয় সামরিক পোশাকে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের নানা ভিডিও।


৯ জানুয়ারি শারিক্বীয়ার ২ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। ২১ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হতে উগ্রবাদী জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সক্রিয় সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম তুহিন ও মোঃ নাঈম হোসেনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে কবির আহাম্মদকে শনাক্ত করে বান্দরবান জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়।


গত ৫ ডিসেম্বর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন একই সংগঠনের আরো ৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে।  গ্রেফতারকৃতরা হলো-গোলাম সারোয়ার (২৫), সাকিব মাহমুদ (২৭), ফরহাদ হোসেন (২২), মুরাদ হোসেন (২১) ও ওয়াসিকুর রহমান নাঈম (২৮)। পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত জঙ্গিদের তারা বিভিন্ন স্থান থেকে খাবার, টাকা পাঠাতো তাদের নিকট। 


সূত্র মতে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে মাঝে মাঝে হিযবুত তাহরীর পোস্টার সাঁটিয়ে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়। কিন্তু মাঠে থেকে নাশকতা চালানোর ওই রকম শক্তি বা সাংগঠনিক ক্ষমতা তাদের নেই। তবে ঘাপটি মেরে থাকা জেএমবি মাঝে মাঝে অঘটন ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে। এরই মধ্যে তারা গত ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গন থেকে পুলিশের চোখে-মুখে পিপার স্প্রে করে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি সুনামগঞ্জের ছাতকের মইনুল হাসান শামীম ও লালমনিরহাটের আদিতমারীর আবু ছিদ্দিক সোহেলকে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ছিনতাইকৃত দুই জঙ্গির এখনো খোঁজ মেলেনি। 


সূত্র জানায়, বর্তমানে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে শারিক্বীয়া শক্তিশালী হচ্ছে। তাদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রও। ইতোমধ্যে তারা পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সম্প্রতি তাদের সামরিক পোশাকে ভারি অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণের ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে দেখা যায় দুর্গম পাহাড়ের ভেতরে অস্ত্র চালানোসহ শারিরিক নানা কসরতে অংশ নিচ্ছে তারা। 


বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। আর যেহেতু চলতি বছর নির্বাচনের বছর এ সুযোগটি তারা নিতে চাইবে। দেশকে অস্থিতিশিল করতে দেশীয় আন্তর্জাতিকভাবে চক্রান্ত চলছে। এখানে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিয়েও অস্থিতিশিল করতে চাইবে এতে কোন সন্দেহ নাই। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তারা। তাই তাদের ব্যাপারে সতর্কতা থেকে আইনের আওতায় আনতে হবে। 


নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, নির্বাচনী বছরগুলোতে অস্থিতিশিল করতে নানা চক্রান্ত হয়ে থাকে। জঙ্গি কিংবা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিয়ে হবে না এর কোন নিশ্চিয়তা নাই। বর্তমানে শারিক্বীয়া নামের যে জঙ্গি সংগঠন তারা যেভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহন করছে তাতে আমাদের উদ্বেগ সৃষ্টি করে। 
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের অনুসন্ধান করে আইনের আওতায় আনলে শঙ্কা কেটে যাবে নয়তো আমাদের আশঙ্কা থেকেই যােেব। 


সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের তীক্ষè নজরদারী রয়েছে। জঙ্গিদের বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটানোর মত সাংগঠনিক শক্তি নেই পাশাপাশি আমরা তাদের অবস্থান জানতে পারামাত্রই অভিযান চালাচ্ছি। যারা আত্নগোপনে রয়েছে তারাও আইনের আওতায় আসবে বলে দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। 


র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযানে জঙ্গিদের গ্রেফতার করছি। গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে তাদের সাংগঠনিক শক্তি কমে যাচ্ছে। তাতে করে আমরা আত্নতুষ্টিতে ভুগছিনা। আমাদের নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। 
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়টাতে হয়তো তারা চাইবে কোন কিছু ঘটনাতে কিন্তু আমরা আমাদের যে কাজ সেটা করে যাচ্ছি।


এন্টি টেরোরিজমের পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন বলেন, অনলাইন ও অফলাইন সবদিকেই এখন মনিটরিংয়ের আওতায়। সুতরাং কেউ কোথাও কিছু করতে চাইলে সহজে পারবেনা। একাধিক সংস্থা মনিটরিং করছে। তাদের অবস্থানের তথ্য পেলেই অভিযান হচ্ছে। 
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় তারা কিছু ঘটাতে পারে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আমাদের যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে সেটি এখন থেকেই চলমান। এন্টি টেরোরিজম ইউনিট সর্বদা এ বিষয়ে মনিটরিং করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ইমরান আলী

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ