প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম
ভারতের গুজরাটে পাচারের পর টুম্পা (১৭) নামে এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগে নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৬। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর দপ্তর কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৬ এর খুলনার অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মোসতাক আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
র্যাব জানায়, ভারতে বসবাসরত যশোরের অভয়নগরের নবাব ও পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার বৃষ্টি পরস্পর স্বামী-স্ত্রী এবং তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভারতে মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাদের চক্রের সদস্যদের সাহায্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভাতরে পাচার এবং বিক্রি করে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন। এই চক্রের সক্রিয় সদস্য বৃষ্টির মা কুলসুম এবং ভাই আল আমিন খুলনা সদর থানা এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করে মানবপাচারে তার মেয়ে এবং জামাইকে সহযোগিতা করে আসছেন।
ভিকটিম টুম্পা তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার ডেমরা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। আসামিরা আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে টিকটক সেলিব্রেটি বানিয়ে দেওয়া ও বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে ভিকটিমকে পাচারকারী বৃষ্টি এবং নবাবের পরিকল্পনায় লেংরা রমজান এবং জুয়েল বিশ্বাসের সহযোগিতায় ঢাকা থেকে খুলনায় নিয়ে আসেন। এরপর বৃষ্টির মা কুলসুমের বাসায় ভিকটিমকে তিন দিন রাখা হয়। পরবর্তীতে বৃষ্টি এবং নবাবের আদেশে কুলসুম এবং আল আমিন ভিকটিমকে মানবপাচার চক্রের সাহায্যে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করেন।
ভারতে একটি বাসায় আটকে রেখে ভিকটিমকে ভারতের এনআইডি কার্ড তৈরি করে দিয়ে তারা বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করাতেন। এরপর বৃষ্টি এবং নবাবের নির্দেশে আলী হোসেনের জিম্মায় অনৈতিক কাজ করার জন্য ভিকটিমকে দুই মাস আটকে রাখা হয়েছিল এবং জোরপূর্বক ভিকটিমের সঙ্গে আলী হোসেনের টিকটক ভিডিও বানানো হতো। পাশাপাশি ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। পরবর্তীতে ভিকটিম পাচারকারীদের সকল গোপন তথ্য জেনে যায় এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেশে আসার চেষ্টা করে।
বিষয়টি নবাব ও বৃষ্টিকে জানান আলী হোসেন। তখন বৃষ্টি এবং নবাব তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। যেন ভিকটিম পাচারকারীদের গোপন তথ্য ফাঁস করতে না পারে। গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের গুজরাট পুলিশ ফোন করে ভিকটিমের বাবাকে জানায় যে, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে অন্য একটি ফোনের মাধ্যমে ভিকটিমের বাবাকে জানানো হয়- আসামি আলী হোসেন তার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন। এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা র্যাব বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর থেকেই র্যাব আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে এবং অভিযান অব্যাহত রাখে। র্যাব তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত করে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি র্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানি ও যশোর ক্যাম্পের একটি যৌথ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যশোর ও খুলনা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ঢাকার ডেমরা থানায় হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।