প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৪:২৫ এএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জ গোমস্তাপুর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের বাছাই করা প্রতিনিধিদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অত্র মৃধাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন অফিস সহায়ক, একজন নৈশ প্রহরী ও একজন আয়া পদ সহ মোট তিনটি পদে ১৪জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
সরেজমিনে গিয়ে একাধিক চাকরি প্রত্যাশীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সকালে প্রথমে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কিছুক্ষণ থামার পরে অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এসে সেখানে না থাকার জন্য অনুরোধ জানান এবং আপনাদের পরবর্তীতে পাওনা পৌঁছে যাবে বলে স্থান ত্যাগ করার জন্য একাধিকবার চাপ দেন। সাংবাদিক প্রতিনিধিরা তাদের কাজে বাধা প্রদান না করতে অনুরোধ করলে তিনি স্থান ত্যাগ করে তার গন্তব্যে চলে যান। ওইদিন রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ করে এক পদে একাধিক চাকরি প্রত্যাশী এবং সেখানে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হতে যাচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়, নিয়োগ কমিটি।
এছাড়াও কয়েকজন চাকরি প্রত্যাশী প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম ও সভাপতি মোকসেদুল ইসলাম ৬ জন প্রার্থীর কাছে টাকা নিয়েছে। নৈশ প্রহরী পদে আজম আলীর কাছে ১১ লাখ, রবিউল ইসলাম এর কাছে ১৭ লাখ, আরো একজনের কাছে ১২ লাখ, গোলাপের কাছে ১১ লাখ ও অফিস সহায়ক পদে তারেকের কাছে ১৭ লাখ এবং আয়া পদে মাসুমা নামের এক গৃহিনীর কাছ থেকে সাড়ে তেরো লাখ টাকা নিয়েছে আর সেটা ভাগ বাটোয়ারা করেছে সভাপতি মোকসেদুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে অফিস সহায়ক পদে এক চাকরি প্রত্যাশী জানান, আমাকে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৮ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য সভাপতি মোকসেদুল ইসলাম প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি আমার নিজের যোগ্যতার বলে চাকরি নিব বলে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে আমাকে তারা তেমনভাবে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের নিজস্ব যে সকল চাকরি প্রত্যাশী ছিল তাদেরকে গুরুত্ব দিয়েছে। তাছাড়া এক পদের জন্য একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সভাপতি টাকা নিয়েছে।এসব নিয়েই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিসহ কমিটির সাথে সমন্বয় না করতে পারার কারণে স্কুলে ঝামেলা বেধে যায়।যার ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিত করে দিয়ে নিয়োগ প্রতিনিধি খাতাপত্র নিয়ে চলে গেছে।
মৃধাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম জানান, নিয়োগের বিষয়ে অর্থ লেনদেন হয়েছে, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি কারো কাছ থেকে একটিও টাকা নেয়নি। আর টাকার বিষয়ে কেউ যদি অভিযোগ করে থাকে সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোকসেদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, একজন ক্যানিডেটকে নিয়ে মতানৈক্যের কারণে আপাতত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিবেদক নিয়োগের বিষয়ে মোটা টাকা লেনদেন হয়েছে সেখানে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নাম আসছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- যাদেরকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে তারা আপনাকে অভিযোগ দিয়েছে না বাইরের লোক অভিযোগ দিয়েছে। সেটা আগে বলেন।
তিনি আরও বলেন, এবি স্কুল বাদ দিয়ে রহনপুরে কোথাও দেখাতে পারবেন যে স্কুল প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের কাজে টাকা নেওয়া হচ্ছে না। আর সেই টাকা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়। এটাতো নতুন কোনো কথা নয়। আপনিতো উন্নয়নের কাজে এসব টাকা ব্যয় না করে জেলা পরিষদ নির্বাচনে এসব টাকা খরচ করেছেন, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, এগুলো উদ্ভট কথা ।আমি রহনপুর গিয়ে আপনার সাথে একসাথে চা খেয়ে এ বিষয়ে কথা বলব। এ বিষয়ে আর বাড়াবাড়ি করিয়েন না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম মোবাইল ফোনে জানান, নিয়োগ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ওখানে যারা নিয়োগ প্রার্থী আছে তাঁদের বিভিন্ন ঝামেলার কারণে আপাতত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। এর বেশী এ বিষয়ে আমি মোবাইলে কথা বলতে চাই না।