• ঢাকা সোমবার
    ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মুখ থুবড়ে পড়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা, অকেজো ৩২ কোটি টাকার মেশিন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩, ০৯:৪৭ পিএম

মুখ থুবড়ে পড়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা, অকেজো ৩২ কোটি টাকার মেশিন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অকেজো পড়ে আছে বায়োমেট্রিক মেশিন

সিটি নিউজ ডেস্ক

কুমিল্লার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইসগুলো বেশিরভাগই বিকল হয়ে আছে। কিছু মেশিন সচল থাকলেও হচ্ছে না এর সঠিক ব্যবহার। ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা ডিভাইসগুলো এখন পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরই পর্যায়ক্রমে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, চান্দিনা ও দেবীদ্বার ছাড়া বাকি ১৪ উপজেলায় এক হাজার ৫১৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয় বায়োমেট্রিক হাজিরা ডিভাইস। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি ৪৫ লাখ এক হাজার ৪৪৫ টাকা।
ডিজিটাল এ যন্ত্রটির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন ও শিক্ষার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা। তবে নিম্নমানের যন্ত্র ও সঠিক তদারকির অভাবে এক বছরে মাথায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাই মেশিনগুলো ঠিক করে পুনরায় চালুর দাবি তাদের।


জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তথ্যমতে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশন অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা আছে ২ হাজার ১০৭টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০৯টি বিদ্যালয়ে যথা সময়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে ২৭ লাখ ১৯ হাজার ৫৫০টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয় বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম। লাকসামে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৭৬টি, মুরাদনগরে ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৮২টি, দাউদকান্দিতে ২৮ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ টাকা ব্যয়ে ১৪২টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০৮টি, বরুড়ায় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫৪টি, বুড়িচংয়ে ২০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৪৭টি, হোমনায় ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৩টি, নাঙ্গলকোটে ৩৩ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫১টি, মেঘনায় ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৫টি, মনোহরগঞ্জে ২৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০৪টি, তিতাসে ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯২টি, সদর দক্ষিণে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩টি এবং লালমাই উপজেলায় ১০ লাখ ৩১ হাজার ৫০০টাকা ব্যয়ে ৬৭টি বিদ্যালয়ে বসানো হয় বায়োমেট্রিক ডিভাইস। এতে সর্বমোট ব্যয় হয় ৩২ কোটি ৪৫লাখ এক হাজার ৪৪৫ টাকা।

যন্ত্রটি স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে উপস্থিত ও ছুটির সময় শিক্ষকরা হাজিরা মেশিনে আঙুলের ছাপ দেবেন। শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু, বছর না ঘুরতেই জেলার প্রায় ৯০ ভাগ ডিভাইস বিকল হয়ে গেছে। বাকিগুলোর নেই কোনো ব্যবহার।
অভিযোগ আছে, অনেক শিক্ষকই চান না ডিজিটাল হাজিরা মেশিন চালু থাকুক। কারণ প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষা অফিসের নাম ভাঙিয়ে অনেক শিক্ষক রাজনৈতিক, সামাজিক অনুষ্ঠান ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সময় কাটান। ফলে তাদের মধ্যে অনেকেই এসব মেশিন নষ্ট করছেন। এছাড়া কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও সঠিক তত্ত্বাবধানের কারণেও দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্রগুলো।
করোনার অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ডিভাইসগুলো ব্যবহার হয়নি। একই সঙ্গে সফটওয়্যার আপডেট না থাকায় এখন আর ব্যবহার হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না কারার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘২০১৯ সালে আমরা স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়ে হাজিরা মেশিন কিনেছিলাম। করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর ব্যবহার করা হয়নি। নতুন করে কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় এখন ব্যবহার হচ্ছে না বায়োমেট্রিক হাজিরা। এরমধ্যে যেসব মেশিন সচল রয়েছে সেগুলোতে ডাটা আপডেট না করায় এবং সার্ভারের সঙ্গে কানেকশন না থাকায় অকার্যকর পড়ে আছে। ফলে বাধ্য হয়ে ম্যানুয়াল হাজিরা খাতা ব্যবহার করতে হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে পুনরায় এটিকে সচল করতে পারেন। এতে তেমন অর্থের প্রয়োজন হবে না। শুধু সদিচ্ছা হলেই চালু করা সম্ভব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও কুমিল্লা মহানগরীর মনোহরপুর আদর্শ সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা সালেহা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের এটি একটি ভালো উদ্যোগ ছিল। কিন্তু আমাদের কিছু অসাধু শিক্ষক আছেন তারা ইচ্ছা করেই উল্টোপাল্টা ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক মেশিন নষ্ট করে দিয়েছেন। এছাড়া কিছু মেশিন মানের কারণেও নষ্ট হয়েছে।’
এ শিক্ষকের মতে, ‘কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করা হয়েছে এটি যেন লোকদেখানো না হয়ে বাস্তব্যে রূপ দেওয়া হয়। এতে শুধু শিক্ষক হাজিরা নয় বাড়বে শিক্ষার মান। একই সঙ্গে কমবে শিক্ষক অনুপস্থিতির মানসিকতা।’
 


আরিয়ানএস/

আর্কাইভ